শবে কদর এর ফযীলত

শবে কদরের ফযীলত

রমযান মাসের ফযীলতের আর একটি প্রধান কারণ, এই মাসে শবে কদরের মত মহামূল্যবান রাতটি রহিয়াছে। এই রাতের ফযীলত মানুষের বর্ণনার অসাধ্য। স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলা এই রাত্রের ফযীলত বর্ণনায় পবিত্র কোরআনে সূরা কদর অবতীর্ণ করিয়াছেন। 

একদা রাসূলে করীম (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামের নিকট বনী ইসরাঈলের আবেদশামাউনের বিষয় বর্ণনা করিলেন যে, এই আবেদ দীর্ঘ দিন জীবিত ছিলেন এবং জীবনভর দিনে রোযা রাখিতেন রাত্রে জাগিয়া এবাদত করিতেন।শামাউনের কথা শুনিয়া কেরাম বিমর্ষ বদনে আরজ করিলেন ইয়ারাসূলাল্লাহ্ (সাঃ) ! আপনার উম্মত আমরা দুর্ভাগা। কেননা, আমাদের আয়ু কম।

আমরা ঐরূপ দীর্ঘ দিন বাঁচিবও না আর তাঁহার মত এবাদতও করিতে পারিব না।রাসূলে করীম (সাঃ) সাহাবীদের কথা এবং তাঁহাদের বিরস বদন দেখিয়া দুঃখিতহইলেন। তাঁহার মনেও প্রশ্নের উদয় হইল, আমার সাহাবীরা তো সত্যই বলিয়াছেন। আমার অল্পায়ুবিশিষ্ট উম্মত কেমন করিয়া শামাউনের মত এবাদত করিবে? সর্বদর্শী আল্লাহর নিকট কিছুই গোপন নহে। তিনি তাঁহার প্রিয় হাবীবের অবস্থা দেখিয়া তখন সূরা কদরসহ ফেরেশ্তো জিব্রাঈলকে প্রেরণ করিলেন, যেন তিনি আশ্বস্ত হইতে পারেন। সূরা কদর নিম্নে উদ্ধৃত হইল-

উচ্চারণঃ ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কাদরি, ওয়ামা আদরাকা মা লাইলাতুল কাদরি, লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহরিন তানাযযালুল মালাইকাতু ওয়াররূহু ফীহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরিন সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজরি।

ইসলামে নামাযের গুরুত্ব
তালাকের মাসাআলা

অর্থঃ [আল্লাহ্ তাআ’লা বলিতেছেন, হে মুহাম্মদ (সাঃ) !] নিশ্চয়ই আমি এই কোরআন কদরের রাত্রে অবতীর্ণ করিয়াছি। [হে মুহাম্মদ (সাঃ) !] আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কি? উহা হাজার মাস হইতেও উত্তম। (অর্থাৎ, যে এই রাত্রে এবাদত করিবে তাহাকে হাজার মাসের এবাদত হইতেও অধিক সওয়াব দান করা হইবে। আল্লাহ তাআ’লার আদেশে এই রাত্রে জিব্রাঈল ফেরেশ্তা (মতান্তরে অন্য ফেরেশতাগণ; এবং রূহসমূহ দুনিয়ায় অবতীর্ণ হয় এবং রাত্র ফজর পর্যন্ত শান্তি বিরাজ করে।এই রাত্রের ফযীলত বহু হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে। এক হাদীসে রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ ফরমাইয়াছেন ঃ

উচ্চারণঃ ইন্নাল্লাহা তাআলা যাইয়্যানাল লায়ালি বিলাইলাতিল কাদরি।

অৰ্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআ’লা শবে কদর দ্বারা রাত্রসমূহের শোভা বর্ধন করিয়াছেন।

অন্য হাদীসে সাহাবী জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলেন, রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ ফরমাইয়াছেন; যে মুমিন ব্যক্তি নেকী ও সওয়াবের উদ্দেশে শবে কদরে দণ্ডায়মান হয় (অর্থাৎ, নামায আদায় করে), তাহার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। অন্য হাদীসে এরশাদ হইয়াছে, রাসূলে করীম (সাঃ) বলেন, তোমাদের কবর নূরের দ্বারা আলোকিত করিতে চাহিলে শবে কদরে এবাদত কর। এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, যেব্যক্তি কদরের রাত্রকে জীবিত রাখে (অর্থাৎ, না ঘুমাইয়া সারারাত এবাদত করে), সে একশত বৎসরের এবাদতের সওয়াব লাভ করিবে। কারণ

আল্লাহ্ তাআলা শবে কদরকে কিছুটা লুকাইয়া রাখিয়াছেন, যেন বান্দা উহা তালাশ করিবার আগ্রহ করে। হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত আছে, রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ ফরমাইয়াছেন, যেব্যক্তি শবে কদরকে জীবিত রাখে, অর্থাৎ, রাত্র জাগিয়া এবাদত করে, আল্লাহ পাক কেয়ামতের দিন তাঁহার অন্তর জীবিত রাখিবেন এবং তাহার সমস্ত সগীরা-কবীরা গোনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হইবে। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফরমাইয়াছেনঃ

উচ্চারণঃ আফযালুল লায়ালী লাইলাতুল কাদরি।

অর্থঃ রাত্রসমূহের মধ্যে শবে কদরই সর্বোত্তম। অর্থাৎ, এই রাত্রের এবাদতে যত অধিক সওয়াব হয় তত আর কোন রাতের এবাদতে হয় না।

এক হাদীসে রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ ফরমাইয়াছেন, যেব্যক্তি কদরের রাত্র পাইয়া উহাতে এবাদত করিবে, আল্লাহ্ তা’আলা তাহার উপর দোযখ হারাম করিয়া দিবেন। আর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, হুযুর (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, যেব্যক্তি কদরের রাত্রে চারি রাকআত নামায পড়িবে এবং প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে একবার সূরা কদর ও সাতাইশবার সূরা এখলাস পাঠ করিবে, আল্লাহ তাআলা তাহাকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মত নিষ্পাপ করিয়া দিবেন এবং তাহার জন্য বেহেশতে হাজার অট্টালিকা নির্মাণ করিয়া রাখিবেন।

বিশেষ কিছু দোয়া

অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলে করীম (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, যেব্যক্তি কদরেররাত্রে নিম্নোক্ত নিয়মে চারি রাকআত নামায আদায়পূর্বক সেজদায় গিয়া নিম্নের পাঠ করত আল্লাহ তাআলার নিকট যেকোন প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাহার সেই প্রার্থনা কবুল করেন। তাহা ছাড়া আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির উপর অজস্র ধারায় রহমত ও নেয়ামত বর্ষণ করেন। এই নামাযের প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে তিনবার সূরা কদর ও পঞ্চাশবার সূরা এখলাস এবং নামায শেষে সেজদায় গিয়া দোআ পাঠ করিবেঃ

উচ্চারণঃ সোবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহ

আকবার। অন্য হাদীসে রাসূলে করীম (সাঃ) ফরমাইয়াছেনঃ

উচ্চারণঃ মান আদরাকা লাইলাতাল্ কাদরি রাফাআল্লাহু কাদ্রাহু ইয়াওমাল কিয়ামাতি।

অর্থঃ যেব্যক্তি শবে কদর পাইবে (অর্থাৎ, শবে কদর পাইয়া তাহার কর্তব্য পালন করিবে), আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাহার মর্যাদা বর্ধিত করিবেন। হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রমযান রাত্রে জাহাজে চড়িয়া সাগর ভ্রমণে গিয়াছিলাম, ঘটনাক্রমে আমি সাগর হইতে সামান্য পানি উঠাইয়া মুখে দিয়াছিলাম, উহা আমার নিকট অতিশয় মিষ্ট মনে হইল।

হঠাৎ আমাদের জাহাজের গতি রহিত হইয়া গেল। তখন নিকটবর্তী দ্বীপের দিকে তাকাইয়া দেখিলাম সমস্ত গাছপালা সেজদায় পড়িয়া আছে। হযরত গাওসুল আযম রচিত গুনিয়াতুত তালেবীন গ্রন্থে উদ্ধৃত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর হাদীসে উল্লেখিত হইয়াছে, কদরের রাত্রে আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিব্রাঈল (আঃ) বহু ফেরেশতা লইয়া দুনিয়ায় নামিয়া আসেন। সে সময় প্রত্যেক ফেরেশতার সাথে একেকটি করিয়া সবুজ রঙ্গের লেজা থাকে এবং ফেরেশতা জিব্রাঈল (আঃ) ছয়শত পাখা দ্বারা সজ্জিত থাকেন। জিব্রাঈল (আঃ) কাবা শরীফের উপর আসিয়া ফেরেশতাগণকে বিভক্ত হইয়া যাইতে হুকুম করেন। তখন তাহাদের কতক পূর্ব দিকে এবং কতক পশ্চিম দিকে চলিয়া যান।

তাহারা দেখিতে থাকেন উম্মতে মুহাম্মদী (সাঃ)-এর মধ্যে কাহারা এই রাত্রে এবাদতে রত আছে। তাহাদের সাথে এই ফেরেশতাগণ মোসাফাহা করেন এবং ভোর না হওয়া পর্যন্ত মোনাজাত করিতে থাকে, ফেরেশতাগণ তাহাদের সেই দোআয় শামিল হইয়া আমীন আমীন করিতে থাকেন। অতঃপর জিব্রাঈল (আঃ) তাহাদিগকে ডাকিয়া বলেন হে বন্ধুগণ ! এখন তোমরা চলিয়া যাইতে পার।

তখন তাহারা জিব্রাঈলের নিকট জিজ্ঞাসা করেন, হে আমাদের নেতা জিব্রাঈল (আঃ) ! বলুন তো উম্মতে মুহাম্মদী (সাঃ)-এর প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করিলেন কি-না? উত্তরে জিব্রাঈল বলেন, বন্ধুগণ শুন ! আল্লাহ মোনাজাতকালে তাহাদের প্রতি ৭০ বার দৃষ্টি করেন এবং সমস্ত গোনাহ মার্জনা করিয়া দেন, তবে চারি প্রকার লোককে আল্লাহ মার্জনা করিবেন না।

তাহারা হইল- (১) যাহারা সদা-সর্বদা মদ্যপান করে। (২) যাহারা পিতা-মাতার অবাধ্য (৩) যাহারা আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ভাব সুসম্পর্ক বর্জন করে। (৪) যাহারা মুমিন-মুসলিম ভাইদের সাথে অহেতুক শত্রুতা পোষণ করে। শবে কদর রমযান মাসে নিহিত থাকিলেও উহা যে কোন্ তারিখে, আল্লাহ তাআলা তাহা নিশ্চিতভাবে বলেন নাই। হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-ও তাহা প্রকাশ করেন নাই। তবে একথা পরিষ্কারভাবে জানা যায় যে, উহা রমযান মাসের শেষ দশ তারিখের যেকোন একটি বিজোড় তারিখের রাত্র। এই হিসাবে ২১/২৩/২৫/২৭ এবং ২৯ তারিখের যেকোন একটি তারিখ হইতে পারে।

এক হাদীসে এইরূপ বর্ণিত আছে যে, রাসূলে করীম (সাঃ)-এর নিকট কতিপয় সাহাবী শবে কদরের তারিখ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় তিনি উত্তরে ২১/২৩ এবং ২৭ প্রভৃতি তারিখের কথা অনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করেন।এই তারিখটি একেবারে নির্দিষ্টভাবে প্রকাশ না করার পিছনে যুক্তি হিসাবে ওলামায়ে কেরাম বলেন, তাহা হইলে অলস লোকগণ বিভিন্ন তারিখে বেশী এবাদত- বন্দেগী না করিয়া শুধু ঐ একটি তারিখের প্রতিই নির্ভর করিত, ফলে তাহাদের এবাদত-বন্দেগী কম হইত এবং তাহারা কম সওয়াবের ভাগী হইত। শবে কদর এইভাবে অপ্রকাশ্য থাকায় লোকগণ উহা লাভ করিবার আশায় রমযানের শেষ দশদিন ধারাবাহিকভাবে এবাদত করিবে।

ইহার ফলে একদিকে যেমন তাহারা শবে কদর প্রাপ্ত হইবে, অন্য দিকে তাহাদের এবাদত-বন্দেগীও বেশী হইবে। তবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শবে কদরের তারিখ এইরূপ বলিলেও ওলামায়ে কেরামের অধিকাংশ বিজ্ঞ ও বুযুর্গ রমযানের সাতাইশ তারিখে শবে কদর হওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করিয়াছেন। এমনকি ইমাম আযম হযরত আবু হানীফা (রহঃ)-ও এই মত সমর্থন করিয়াছেন।

তিনি এই তারিখে শবে কদর হওয়ার পক্ষে এইরূপ একটি বিচার-বিশ্লেষণও করিয়াছেন যে, লাইলাতুল কদর শব্দটির মধ্যে নয়টি হরফ আছে এবং সূরা কদরের মধ্যে কদর শব্দটি তিনবার উল্লেখ হইয়াছে। সে মতে উহাতে মোট সাতাইশটি হরফ হয়। অতঃপর ইহা দ্বারা একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আবিষ্কার করত তিনি সাতাইশ তারিখেই শবে কদর বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন।

ইহাছাড়া রাসূলে করীম (সাঃ)-ও বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে সাতাইশ তারিখের এবাদতের প্রতি অপেক্ষাকৃত বেশী জোর দিয়াছেন। যেমন, হাদীসে উল্লেখ আছে, যেব্যক্তি সাতাইশ তারিখের রাতকে জীবিত রাখে অর্থাৎ, এই রাতে জাগ্রত থাকিয়া এবাদত-বন্দেগী করে, আল্লাহ্ তাহার আমলনামায় সাতাইশ হাজার বৎসরের এবাদতের সওয়াব লিখিয়া দেন এবং তাহার জন্য বেহেশতে এত অধিক গৃহ নির্মাণ করা হয় যাহার সংখ্যা কেবল আল্লাহ তাআলাই জানেন। অন্য হাদীসে আছে, রাসূলে করীম (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, যেব্যক্তি শবে কদরে (সাতাইশে রমযান) চারি রাকআত নফল নামায প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে একবার সূরা কদর ও সাতাইশবার সূরা এখলাস দ্বারা আদায় করিবে, আল্লাহ তাআলা তাহাকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মত বেগোনাহ করিয়া দিবেন এবং তাহার জন্য বেহেশতে একহাজার প্রাসাদ নির্মাণ করিয়া রাখিবেন।

অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ ফরমাইয়াছেন, যেব্যক্তি রমযানের সাতাইশ তারিখ রাত্রে দুই রাকআত নফল নামাযের প্রথম রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে একবার সূরা কদর এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে তিনবার সূরা এখলাস পাঠ করিবে, আল্লাহ্ তাআলা তাহাকে শবে কদরের পূর্ণ সওয়াব দান করিবেন, তাহার রিযিক বৃদ্ধি করিবেন এবং তাহাকে হযরত ইদ্রীস (আঃ), হযরত শোআয়ব (আঃ), হযরত ইউনুস (আঃ)-এর তুল্য সওয়াব দান করিবেন। ইহা ছাড়া তাহাকে আল্লাহ তাআলা বেহেশতে মাশরেক হইতে মানব পর্যন্ত বিরাট একটি শহরের অধিকারী করিবেন।

অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলে করীম (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, মিযান মাসের সাতাইশ তারিখ রাত্রে এবাদতের নিয়তে যেব্যক্তি গোসল করিবে, পা ধুহবার পূর্বেই আল্লাহ্ তাআলা তাহার গোনাহসমূহ মার্জনা করিবেন। শবে কদরের নিদর্শন সম্পর্কে বর্ণিত আছে, যেদিন প্রকৃতই শবে কদর হয় সেদিন রাত্রে আসমান হইতে লক্ষ লক্ষ ফেরেশতা নাযিল হইয়া এবাদতকারীদের সহিত মোসাফাহা করেন।

এই মোসাফাহা অবশ্য এবাদতকারী বান্দাগণ প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করিত পারেন না। তবে তাহাদের সহিত ফেরেশতাদের মোসাফাহার নিদর্শন হইল, ঐ সময় তাহারা অন্তরে অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করে, চক্ষু হইতে খুশীর অশ্রু নির্গত হয় এবং আল্লাহর প্রতি আকর্ষণ ও মহব্বত বৃদ্ধি পায়। জানিয়া রাখিবে, উহাই দোআ কবুলের সময়। এই বর্ণনার সাথে বহু বুযুর্গই একমত হইয়াছেন।

শবে কদরের নামায আদায়ের নিয়ম

এশার নামায বাদে তারাবীহ ও বেতের নামায জামাআতে আদায় করিয়া দুই দুই রাকআতের নিয়তে শবে কদরের নামায পড়িতে আরম্ভ করিবে। এই নামায চারি রাকআতের নিয়তেও আদায় করা যায়। কিন্তু দুই দুই রাকআতের নিয়তে আদায় করিলে সওয়াব অধিক হয়। প্রতি চারি রাকআতের পরে শবে কদরের পূর্বোল্লিখিত দোআটি কয়েকবার পাঠ করিয়া মোনাজাত করিবে।

এই নামাযের রাকআত সংখ্যার কোন বাধ্যবাধকতা নাই। যত বেশী পড়া যায় ততই ভাল। এ নামাযে সূরা-কেরাআত পড়া সম্পর্কে বেশ কিছু নিয়ম আছে। যথা-প্রথম চারি রাকআতর প্রতি দুই রাকআতের পহেলা রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে

  • কবার সূরা কদর দ্বারা এবং দ্বিতীয় রাকআত সূরা ফাতেহার সাথে তিনবার সূরা এখলাস দ্বারা আদায় করিবে। তারপর চারি রাকআতের প্রতি দুই রাকআতের পহেলা রাকআত সূরা ফাতেহার সাথে একবার সূরা কদর এবং দ্বিতীয় রাকআত সূরা ফাতেহার সাথে সাতবার সূরা এখলাস দ্বারা আদায় করিবে। তারপরের চারি রাকআতের প্রতি দুই রাকআতের পহেলা রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে একবার সূরা কদর এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে দশবার সূরা এখলাস পাঠ করিবে।
  • তারপর চারি রাকআত নামাযের প্রতি দুই রাকআতের প্রথম রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে তিনবার সূরা কদর ও দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে সাত বার সূরা কদর দ্বারা আদায় করিবে। আর চারি রাকআত নামাযের প্রতি দুই রাকআতের প্রথম রাকআতে সুরা ফাতেহার সাথে তিনবার সূরা কদর ও দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে পঞ্চাশবার সূরা এখলাস পড়িবে।
  • তারপর চারি রাকআত নামাযের প্রতি দুই রাকআতের পহেলা রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে তিনবার সূরা কদর এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে একশতবার সূরা এখলাস পড়িতে হইবে। ইহাছাড়া সাধারণ নিয়ম হিসাবে দুই দুই রাকআতের প্রথম রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে একবার সূরা কদর এবং দ্বিতীয় রাকআতে তিনবার সূরা এখলাস দ্বারা যত রাকআত ইচ্ছা আদায় করিবে।
  • এই নিয়মই অপেক্ষাকৃত সহজ। নামায ব্যতীত শবে বরাতের ন্যায় এই রাতেও দোআ-দরূদ, তাসবীহ-তাহলীল, যিকির-আযকার, কোরআন তেলাওয়াত প্রভৃতিতে বহু সওয়াব হয়। মোটকথা, নামায, তেলাওয়াত বা যিকির-আযকার ইত্যাদি যেকোন কিছুতে লিপ্ত থাকিয়া রাত কাটাইয়া দিবে। শবে কদরে নিম্নোক্ত দোআটি পড়ার বহু ফযীলত ও গুরুত্ব বর্ণিত হইয়াছে।

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাফা আফুউন তুহিরুল আফওয়া ফাফু আন্নী ইয়া গাফুরু ইয়া গাফুরু।শবে কদরের নামাযের নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদরিন্ নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

শবে কদর যাহাতে কোনরূপে হাতছাড়া হইতে না পারে তজ্জন্য রমযান মাসের শেষ দশ দিন, সাত দিন কিংবা তিন দিন এবাদতের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা একটি বিশেষ ব্যবস্থা, এই ব্যবস্থাকেই এতেকাফ বলে। এতেকাফকালে দুনিয়ার যাবতীয় কাজকর্ম পরিত্যাগ করিয়া শুধুমাত্র এবাদতেই লিপ্ত থাকিতে হয়। রাসূলে করীম (সাঃ) প্রতি বৎসরই রমযানের শেষভাগে এতেকাফ করিতেন। সারাজীবনে তাঁহার মাত্র একবার এতেকাফ কাযা হইয়াছে।

কাযা এতেকাফও তিনি শাওয়াল মাসে আদায় করিয়াছেন।কয়েকবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রমযানের প্রথম ভাগেও এতেকাফ করিয়াছেন বলিয়াবর্ণিত আছে। তিনি শেষ জীবনে রমযানের শেষ ভাগেই এতেকাফে বসিতেন। অধিকাংশ সময় তিনি রমযানের শেষ দশ দিনই এতেকাফ করিয়াছেন।

এতেকাফ অবস্থায় নফল নামায, দোআ-দরূদ, তাসবীহ্-তাহলীল, তেলাওয়াতে কোরআন, যিকির-আযকার, তাছাড়া ধর্মালোচনা কিংবা দ্বীনী পুস্তকাদি পাঠ ইত্যাদিতে রত থাকিতে হয়। এতেকাফকালে নিদ্রা গেলে এতেকাফ ভঙ্গ হয় না, তবে দুনিয়াবী কোন কাজ করিলে বা তদুপলক্ষে বাহিরে গেলে কিংবা শরয়ী ওযরে বাহিরে গিয়া প্রয়োজনাতিরিক্ত দেরী করিলে এতেকাফ নষ্ট হইয়া যায়।

পায়খানা-প্রস্রাব ওঅযু-গোসলাদির জন্য মসজিদের বাহিরে গেলে এতেকাফের কোন ক্ষতি হয় না। আর জুমআর জামাআত অন্য মসজিদে হইলে তদুপলক্ষে তথায় যাওয়ায়ও কোন দোষ নাই। স্ত্রীলোকেরা এতেকাফের জন্য মসজিদের বদলে কোন পৃথক গৃহ বা বাসগৃহে কোন আলাদা কক্ষ নির্বাচিত করিয়া লইবে। এ’তেকাফের সময় একেবারে নীরব থাকা উচিত নহে। ইহাতে এতেকাফ মাকরূহ হয়।এ’তেকাফ আদায় কুরা সুন্নতে মোআক্কাদায়ে কেফায়া।

অর্থাৎ, একটি গ্রাম বা মহল্লাহর দুই একজন লোক এই সুন্নত আদায় করিলেই সকলের পক্ষ হইতে আদায় হইয়া যায়। যদি কেহই আদায় না করে তবে এই গ্রাম বা মহল্লাবাসী সকলেই সুন্নতে মোআক্কাদা তরকের গোনাহে গোনাহগার হয়। সুন্নত এ’তেকাফের জন্য রোযার মাস হওয়া শর্ত।

অর্থাৎ, মাহে রমযানেই এই এতেকাফ করিতে হয়। অবশ্য রমযান ছাড়াও এতকাফ করা যায়, তবে উহা নফল বা মোস্তাহাব এতেকাফ গণ্য হয়।এতেকাফের ফযীলত সম্পর্কে হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ ফরমাইয়াছেন, যেব্যক্তি সারাজীবনে অন্তত একদিনের জন্যও এতেকাফে বসিবে, কেয়ামতে আল্লাহ্ তাআলা দোযখকে তাহার নিকট হইতে পনর শত বৎসরের পথদূরে রাখিবেন। সুন্নতে মোআক্কাদা এ’তেকাফের নিম্ন মুদ্দত অন্যূন তিন দিন তিন রাত, ইহার কম সময়ের এতেকাফে সুন্নতে মোয়াআদা আদায় হইবে না।