রোযা ইসলামের পঞ্চ বিনা বা রোকনের তৃতীয় বিনা বা রোকন । ইহা অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যাবে। সুবহে ছাদেকের পূর্বমুহুর্ত হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়ত করে সমূদয় খাদ্য-পানীয় ও স্ত্রী সঙ্গম ইত্যাদি হতে বিরত থাকাকে শরীয়তে রোযা বলে ।
রোযার গুরুত্ব ও ফযিলত নিয়ে আলোচনা করব
এর ফযীলতের শেষ নেই। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন স্বয়ং আপন কুদরতী হাতে এর পুরষ্কার বিতরণ করবেন। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, রমযান মাস উপস্থিত হলে বেহেশতের দরওয়াজাগুলি খুলে দেয়া হয় এবং দোযখের দরওয়াজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তান সিকল দ্বারা আবদ্ধ থাকে। বোখারী ও মুসলিম শরীফে আছে, মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, রোযাদার ব্যক্তির জন্য দু’টি অতি আনন্দদায়ক সময় আছে, একটি ইফতারের সময় এবং অন্যটি আল্লাহ পাকের দীদার লাভের সময়।
তাহাজ্জুদ নামাযের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে জেনে নিন
আমলের জন্য কিছু গুরুত্বপুর্ন দুরুদ
সুরা ইয়াসিনের ফযিলত
রোযাদারগণের উপরোক্ত হাদীস দ্বারা এ সুসংবাদ প্রদান করা হল যে, সাথে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালার দীদার বা সাক্ষাৎ লাভ হবে। মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, রোযা হচ্ছে ঢাল-স্বরূপ। তোমাদের মধ্যে কেউ রোযা রাখলে সে যেন কোন বদ কথা না বলে, কলহ না করে। যদি তোমাকে কেউ গালি দেয় অথবা আঘাত করে, তবে সে যেন বলে ভাই আমি রোযা রেখেছি।
বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ পাকের নিকট মেশক আম্বর অপেক্ষা অধিক প্রিয় । তিনি আরও বলেন, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য যে কেউ একটি রোযা রাখবে, তিনি তাকে দোযখের আগুন হতে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে রাখবেন । ছহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, রোযাদারের নিদ্রাও এবাদতে পরিগণিত হয় । হযরত আবুল আলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেন, রোযাদার গীবত (পরনিন্দা) হতে বিরত থাকতে পারলে সমস্ত দিনই তার এবাদতের মধ্যে গণ্য হবে।
হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত আছে, হালাল বস্তুর দ্বারা ইফতার করত ঐ সময় দোয়া করলে রোযাদারের দোয়া আল্লাহ পাকের শাহী দরবারে কবুল হয়ে থাকে । হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রোযা রেখে মিথ্যা কথা পরিত্যাগ করতে পারে নাই, মহান আল্লাহ পাক তার রোযার প্রতি রাজী নন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, কবর হতে উঠা মাত্রই তিন প্রকার লোকের সাথে মহান আল্লাহর ফেরেশতাগণ মোসাফাহা করবেন, এরা হলেন-
(১) শহীদ, (২) রমযান মাসে ইবাদাতকারী ও (৩) আরাফার দিনের রোযাদার ব্যক্তি।
আরাফার দিন রোযা রাখার ফযীলতঃ
হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সম্বোধন করে বলেন, হে আয়েশা! বেহেশতে হীরা ইয়াকুত, সোনা, চান্দি ইত্যাদি বহু রত্ন দ্বারা তৈয়ারী সুন্দর সুন্দর বালাখানা রয়েছে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! এর মধ্যে কোন্ ধরণের লোক থাকবে ? তিনি উত্তর করলেন, আরাফার দিনের রোযাদারগণ ।
তিনি আরও বললেন, হে আয়েশা ! আল্লাহ পাকের নিকট জুময়া ও আরাফার দিন সকল দিন হতে অধিকতর উত্তম। ঐ দিন অত্যধিক রহমত অবতীর্ণ হয়ে থাকে । বিতাড়িত শয়তান তাকে অতি মন্দ মনে করে। হে আয়েশা ! স্মরণ রেখ, আরাফার দিন রোযা রাখলে তার জন্য ত্রিশটি নেকীর দরজা খোলা ও ত্রিশটি বদীর দরজা বন্ধ হয়।
ইফতারের সময় পানি পান করলে তার সর্বাঙ্গের শিরাসমূহ তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং বলে, হে খোদা ! এর প্রতি আগামী ফজর পর্যন্ত রহমত অবতীর্ণ কর।রজব ও শাবান মাসের বিশেষ রোযার ফযীলত : মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন লোকসকল খালি পায়ে ও উলঙ্গ শরীরে নিজ নিজ কবর হতে মাতৃগর্ভ হতে জন্ম হওয়ার ন্যায় উত্থিত হতে থাকবে। হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আশ্চার্য হয়ে বললেন, পুরুষ স্ত্রী একত্রে উঠবে কি ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর করলেন, হ্যাঁ।
ঘরে বসে আয় করুন সহজে
কিভাবে বুঝবেন ইমো হ্যাক হয়েছে
হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহা লজ্জাভরে আফসোস সহকারে আরজ করলেন, তবে শরমগাহ কিভাবে দেখাবে ? মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন পবিত্র হস্ত হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহার কাঁধে রেখে বললেন, হে আবু বকর দুহিতা ! ঐদিন কারও অন্যদিকে তাকাবার সাধ্য থাকবে না। মাটিতে উঠেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে। পানাহার ব্যতীত চল্লিশ বছর পর্যন্ত এ ভাবেই গত হয়ে যাবে।
কারও কদম, কারও কোমর আবার কারও সিনা পর্যন্ত ঘামের ভিতর ডুবে থাকবে। হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রাদ্বিইয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেউ কাপড় পরিহিতাবস্থায় উঠরে কি ? তিনি উত্তর করলেন, নবীগণ ও তাঁদের পরিবারবর্গ এবং রজব, শাবান ও রমযান মাসের রোযাদারগণ বস্ত্রসহকারে উঠবে। এ ছাড়া অন্য সব লোক ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর থাকবে।
শাওয়াল মাসের রোযার ফযীলত :
ছহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখলে পূর্ণ এক বছরের রোযার সাওয়াব রোযাদারের নামে লেখা হয়ে যাবে ৷ প্রতিমাসের তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখকে আইয়্যামে বীয বলে ।
এতে রোযা রাখা মোস্তাহাব। (মিশকাত) আরাফার দিন রোযা রাখলে অতীত ও ভবিষ্যতের দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আশুরার তারিখেও রোযা রাখা তদ্রুপ। যে কোন নফল রোযা পর পর দুই দিন রাখা ভাল । হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের নিয়মানুযায়ী একদিন অন্তর একদিন রোযা রাখা উত্তম । স্ত্রীলোক স্বামীর বিনানুমতিতে নফল রোযা রাখা ঠিক নয় । (মালাবুদ্দা)
রোযার প্রকারভেদ ঃ রোযা ছয় প্রকার। যথা- (১) ফরয, (২) ওয়াজিব,
(৩) সুন্নত, (৪) মোস্তাহাব, (৫) নফল ও (৬) মাকরূহ। -(জাওয়াহেরুল ফেকাহ) ফরয রোযা ঃ সম্পূর্ণ রমযান মাসের রোযা রাখা ফরয।
ওয়াজিব রোযা ঃ
যে ব্যক্তি মান্নত, কাফ্ফারা ও নফল রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে সে ভাংতি রোযা পূরণ করা ।
সুন্নত রোযা ঃ মহররম মাসের নয়, দশ অথবা দশ. এগার এই দুই দিন রোযা রাখা।
মোস্তাহাব রোযা : শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা এবং প্রতি মাসের তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখের রোযা রাখা।
নফল রোযা ঃ উপরোল্লিখিত নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত এবং নিষিদ্ধ দিন ব্যতীত অন্যান্য যে কোন দিন রোযা রাখা।
.মাকরূহ তাহরীমি রোযা ঃ আইয়্যামে তাশরীফ ও উভয় ঈদের দিন রোযা রাখা।
মাকরূহ তানযীহ রোযা : যে কোন নফল রোযা মাত্র একটি রাখা।
রমযান মাসের রোযার বিবরণ ঃ
রমযান মাসের চাঁদ দেখলে কিংবা কোন অসুবিধার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাসের চাঁদ পুরাপুরি ত্রিশ দিন শেষ হলে রমযান মাসের রোযা রাখা প্রতিটি জ্ঞানবান মুসলমান পুরুষ এবং হায়েয নেফাস হতে পাক পবিত্র হওয়া প্রতিটি বালেগা মুসলমান নারীর উপর ফরয করা হয়েছে। শেষ রাতে সুবহে ছাদেকের পূর্বে পানাহার করার পর রোযার নিয়ত করিতে হয়। সাবধান ! সেহরী খাওয়ার পর পান অথবা অন্য কিছু মুখে রেখে ঘুমিয়ে গেলে এবং সকাল পর্যন্ত তা মুখে থেকে গেলে রোযা শুদ্ধ হবে না।
রমযানের রোযার নিয়ত
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন আছ্মা গাদাম মিন শাহরি রমাদ্বানাল মুবারাকি ফারদ্বাল লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম।
অর্থ ঃ আমি আগামীকল্য পবিত্র রমযান শরীফের একটি ফরয রোযা রাখার জন্য ইচ্ছা করলাম। হে আল্লাহ পাক ! বাস্তবিকই তুমি শ্রবণকারী ও জ্ঞানী, তা আমা হতে কবুল কর। সাহরী খাবার পর নিয়ত করতে মনে না থাকলে পরের দিন দ্বি-প্রহরের পূর্বে নিয়ত করলে “গাদামের পরিবর্তে সে স্থানে “আল-ইয়াওমা”বলতে হবে । (অর্থাৎ আজকে)
ইফতারের বিবরণ
সূর্যাস্ত হবার সাথে সাথেই ইফতার করা কর্তব্য । বিলম্ব করা মাকরূহ। অবশ্য আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে কিঞ্চিত বিলম্ব করে ইফতার করবে। ইফতার করতে সর্বোৎকৃষ্ট বস্তু হল খোরমা, পানি, শরবত ইত্যাদি ।
ইফতারের দোয়া
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছুমতু লাকা ওয়া তাওয়াক্কালতু আ’লা রিযক্বিকা ওয়াফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন ।
অর্থ ঃ হে আল্লাহ পাক ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোযা রেখেছিলাম এবং তোমারই উপর ভরসা করেছি ও (এখন) তোমারই অনুগ্রহ দ্বারা ইফতার করতেছি। হে রহমান ও রহীম |
ইফতারের সময় :
সূর্যাস্ত গিয়েছে বলে পূর্ণ বিশ্বাস হলে তৎক্ষণাৎ রোযা খুলতে হয় । বিলম্ব করা মাকরূহ। (শামী) ইহুদীগণ তারকা না দেখা পর্যন্ত ইফতার করত না ও অধিক রাত থাকতে ছেহরী, খাওয়ায় অভ্যস্ত ছিল। অতএব, তাদের সাথে যেন কোন বিষয়েই মিল না থাকে তার জন্য মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সময়মত সেহরী খাওয়া এবং ঠিক সময়ে তাড়াতাড়ি ইফতার করার আদেশ করেছেন।
যদি সূর্যাস্ত সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে তখন নিঃসন্দেহ না হওয়া পর্যন্ত ইফতার করা নাজায়েয । লবণ দ্বারা ইফতার করা ঠিক নয়, বরং মিষ্টান্ন অথবা খেজুর দ্বারা ইফতার করা ভাল।যে কারণে রোযার কাযা এবং কাফ্ফারা আদায় করতে হয় : কেউ ইচ্ছা করে পায়খানা বা প্রসাবের রাস্তার যে কোন এক স্থান দিয়ে সঙ্গম করলে বা করালে । ইচ্ছামত পানাহার করলে, ঔষধ সেবন করলে, সিঙ্গা লাগালে, রোযা নষ্ট হয়েছে ধারণা করে পানাহার করলে। এসব কারণে রোযার কাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই আদায় করতে হবে। (নুরুল ইযাহ)
রোযার কাফ্ফারা আদায় করার নিয়মঃ
রোযার কাফ্ফারা তিন প্রকারে আদায় করা যেতে পারে। (১) বিরামহীন দুই মাস রোযা রাখা। এর মধ্যে ৬০টি রোযা পূর্ণ হবার পূর্বে যদি একটি ভেঙ্গে ফেলে তবে পুণরায় প্রথম হতে আরম্ভ করতে হবে। মেয়েলোকের কাফ্ফারা রোযার মধ্যে মাসিক হলে রোযা ভেঙ্গে ফেলতে হবে তার পর মাসিক হতে পবিত্র হওয়ার সাথে সাথে আরম্ভ করতে হবে। তবে প্রথম হতে আরম্ভ করতে হবে না। (২) কাফ্ফারা রোযা রাখতে অক্ষম হলে একজন মিসকীনকে ২ বেলা করে ৬০ দিন পরিতৃপ্তিসহকারে খানা খাওয়ায়ে দেয়া। (৩) ১ম এবং ২য় হুকুম পালন করতে অক্ষম হলে একজন ক্রীতদাসকে আজাদ করে দেয়া। (জাওয়াহেরুল ফেকাহ)
বছরের পাঁচ দিন রোযা রাখা হারাম ঃ
(১) ঈদুল ফিতরের দিন । (২) ঈদুল আযহার দিন । (৩) যিলহজ্জ মাসের ১১, ১২, ১৩ তারিখ। এই পাঁচ দিন রোযা রাখা হারাম।
যে কারণে রোযা নষ্ট হয় এবং শুধু কাযা করতে হয় ঃ
(১)অসাবধানতাবশত যেমন, ওযূ করার সময় কণ্ঠনালীতে পানি প্রবেশ করলে।
(২) বলপূর্বক কেউ কিছু খাওয়ায়ে দিলে ।
(৩) পায়খানা বা প্রসাবের যে কোন দ্বার দিয়ে পিচকারি করালে ।
(৪) নাক দ্বারা পানি মস্তকে টেনে নিলে।
(৫) কানে ঔষধ বা তৈল প্রবেশ করালে।
(৬) পেটের কিংবা মস্তকের জখমে ঔষধ লাগালে যদি তা ভিতরে প্রবেশ করে।
(৭) মুখভরে বমি করলে ।
(৮)রাত আছে অনুমান করে সুবহে ছাদেকের পর সেহরী খেলে।
(৯) সূর্যাস্ত গিয়েছে অনুমান করে বেলা থাকতে ইফতার করলে।
(১০) ভুলক্রমে পানাহার করে রোযা ভঙ্গ হয়েছে ধারণা করে ইফতার করে ফেললে।
(১১) নিদ্রিতাবস্থায় হলকুমে কিছু প্রবেশ করলে।
(১২) নিদ্রিত অবস্থায় মনের অজ্ঞাতসারে সঙ্গম করলে ।
(১৩) সম্পূর্ণ রমযান মাসে একটি রোযারও নিয়ত না করলে ।
(মালাবুদ্দা) যে কারণে রোযা মাকরূহ হয় ঃ
(১) কারো অগোচরে গীবত করলে ।
(২) কোন জিনিসের স্বাদ গ্রহণ করলে।
(৩) কিছু মুখে দিয়ে চাবালে ।
(৪) রোযা রেখেছে বলে একেবারে নীরব থাকলে।
(৫) বিনা প্রয়োজনে বারবার কুলি করলে ।
(৬) বিনা প্রয়োজনে নাকে পানি দিলে।
(৭) মাজন দ্বারা দাঁত মাজলে ।
(৮) পানিতে নেমে বায়ু ছাড়লে।
(৯) ভিজা কাপড় শরীরে জড়ায়ে রাখলে।
(১০) সবসময় গালি গালাজ করলে।
(১১) মিথ্যা কথা বললে ।
(১২) ইচ্ছা করে বমি করলে।
(১৩) বিনা বীর্য পতনেও কোন জীবের সাথে সঙ্গম করলে। (হেদায়া)
যে কারণে রোযা মাকরূহ হয় না ঃ
(১) স্বপ্নদোষ হলে।
(২) ভুলে কিছু খেয়ে ফেললে ।
(৩) বীর্য নির্গত হলে।
(৪) শরীরে তেল লাগালে।
(৫) ধুলাবালি গলার মধ্যে প্রবেশ করলে।
রোযার কতিপয় জরুরী মাসয়ালা
আকাশে মেঘ থাকার কারণে রমযানের চাঁদ চোখে দেখা না গেলে একজন পরহেযগার পুরুষ কি স্ত্রী চাঁদ দেখেছে বলে সাক্ষ্য প্রদান করলে তা গ্রহণীয় হবে। কিন্তু ঈদের চাঁদ দেখাতে এরূপ সন্দেহ উপস্থিত হলে যত বড় পরহেযগারই হোক না কেন, এক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহনীয় হবে না। বরং দুই জন পরহেযগার পুরুষ অথবা একজন পরহেযগার পুরুষ ও দুই জন পরহেযগার স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য প্রয়োজন হবে।
(হেদায়া) চাঁদ দেখে এরূপ বলা ঠিক হবে না যে এটা গত কালকের চাঁদ হতে পারে। স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর পক্ষে নফল রোযা রাখা জয়েয নয়। বিনা অনুমতিতে রাখা নফল রোযা স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং পরবর্তীতে যে কোন সময় তার আদেশ অনুযায়ী কাযা আদায় করতে হবে। সেহরী খাওয়া অতি সওয়াবের কাজ । সেহরীর নিয়তে সামান্য পানি পান করলেও সাওয়াবের ভাগী হবে। যদি কেউ রোযার কথা ভুলে গিয়ে অথবা অধিক রাত রয়েছে ধারণা করে স্ত্রী সহবাসে কিংবা পানাহারে রত হয়, এমতাবস্থায় হঠাৎ রোযার কথা মনে পড়ে যায় তাহলে তখনই যদি স্ত্রীসহবাস হতে পৃথক হয়ে যায় অথবা মুখ হতে লোকমা ফেলে দেয়, তবে রোযা নষ্ট হবে না। (দুররুল মোখতার)
রোযাদারের পক্ষে যে কোন সময় মেসওয়াক করা দুরস্ত আছে (যদি দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়ার সম্ভাবনা না থাকে)। (হেদায়া) রোযা রেখে স্বামী-স্ত্রী উলঙ্গ শরীরে উভয়ের গুপ্তস্থান পরস্পর মিলিত করা মাকরূহ । লোবান ও অন্যান্য ধুঁয়া জাতীয় সুগন্ধি নাকে প্রবেশ করতে দিলে (হুক্কা পান করার ন্যায়) রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু আতর, গোলাপ ফুল ও অন্যান্য বস্তুর সুগন্ধি গ্রহণ করলে (যাতে ধুয়া নেই) রোযা নষ্ট হবে না ।
রমযান মাসের ফযীলত ও এবাদত
রমযান আরবী বৎসরের অষ্টম মাস। এই মাসের ফযীলতের সহিত বৎসরের অন্য কোন মাসের ফযীলতের তুলনা হয় না। ইহার ফযীলত অনেক বেশী। ইহাকে আল্লাহ তাআলা খাস ফযীলত দান করিয়াছেন। এই মাসের যেকোন এবাদতের সওয়াব অন্যান্য মাসের এবাদত অপেক্ষা ৭০ গুণ বেশী। আল্লাহ তাআলা এই মাসে উম্মতে মুহাম্মদী (সাঃ)-এর প্রতি ত্রিশটি রোযা ফরয করিয়াছেন। কোরআন মজীদে এরশাদ হইয়াছে ঃ
উচ্চারণঃ ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ কুতিবা আ’লাইকুমস সিয়ামু কামা কুতিবা আ’লাল্লাযীনা মিন কাবলিকুম লাআ’ল্লাকুম তাত্তাকূন।
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর (রমযান মাসের) রোযা ফরয করা হইয়াছে, যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হইয়াছিল, যেন তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। রমযান মাসে প্রতিদিন রোযা আদায়কারীদের দুই দুইটি করিয়া ফরয আদায় হয়, একটি ফরয রোযার এবং অন্যটি রোযার নিয়তের। রোযা মানুষের পাপরাশি জ্বালাইয়া-পোড়াইয়া নিঃশেষ করিয়া দেয় এবং দেহ কাঠামোকে পাপমুক্ত ও পবিত্র করে। এই প্রসঙ্গে রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ ফরমাইয়াছেন ঃ
উচ্চারণঃ মান সামা রামাদানা ঈমানাওঁ ওয়া ইহতিসাবান খারাজা মিন যুনূবিই কাইয়াওমিন ওয়ালাদাতহু উন্মুহু। ওয়া ফী রেওয়ায়াতিন মান সামা রামাদানা আওয়ালাহু ইলা আখিরিহী খারাজা মিন যুনূবিহী কাইয়াওমিন ওয়ালাদাতহু উন্মুহু।
অর্থঃ (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলে করীম (সাঃ এরশাদ করিয়াছেন), যেব্যক্তি রমযান মাসের প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত রোযা আদায় করে; সে নিজের গোনাহসমূহ হইতে এমনভাবে বাহির হইয়া আসে যেন আজই তাহার মাতৃগর্ভ হইতে ভূমিষ্ঠ হইয়াছে।
1 thought on “রোযার গুরুত্ব ও ফযিলত এবং রোযার প্রতিদান আল্লাহ্ কি দিবেন সে সম্পর্কে জেনে নেই”