প্রাণীর ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা

প্রাণীর ঔষধি গুনাগুন জেনে নেই

প্রাণীর ঔষধি গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না।বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আমাকদের প্রয়োজন হয় ঔষধের।আর এই ওষুধ তৈরি হয় ভেষজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ থেকে। বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক তৈরীর কাঁচামাল হলো বিভিন্ন ধরনের প্রাণী।কিছু প্রাণী থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান ঔষধ পেয়ে থাকি।একটা সময় ছিল যখন এখনকার মতো চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত ছিল না।প্রাণীর ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা আসাধারন।

এখনকার মতো অভিজ্ঞ ডাক্তার ছিলনা সে সময়কার মানুষ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী দিয়ে চিকিৎসা করত। কোন প্রাণীর দাঁত কোন প্রাণীর চামড়া কোন প্রাণীর মাংস কোন প্রাণীর কলিজা এসব দিয়ে তখন ঔষধ তৈরি করা হতো এবং সে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হতো। এখন সেই চিকিৎসা বিজ্ঞান আধুনিক রূপ নিয়েছে এখনো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের জন্য প্রাণ এর প্রয়োজন হয় শুধু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আরও বিভিন্ন ধরনের ঔষধের জন্য প্রাণী ব্যবহার করা হয়।আজকে আমরা আলোচনা করব কোন প্রাণীর ঔষধি গুনাগুন রয়েছে।

নামাযের গুরুত্ব
অযুর সঠিক নিয়ম ও দোয়া

ঝিনুকের ঔষধি গুণাগুণ

আল্লামা কাজবিনি রহ. লিখেছেন : ঝিনুক গুঁড়া করে হাড়ভাঙা এবং হাড়চ্যুতির উপর প্রলেপ দিলে উপশম হয়। এটা সিরকার সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা নাক দিয়ে রক্তপড়া রোগের জন্য বিরাট উপকারী। ঝিনুকের গোশত কুকুরে কামড়ালে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য খুবই উপকারী। ঝিনুক পোড়া ছাই দ্বারা দাঁত মাজলে দাঁত শক্ত ও উজ্জ্বল হয়। সুরমায় মিলিয়ে চোখে লাগালে চোখের জখম ঠিক হয়ে যাবে।

অবাঞ্চিত লোম উপড়িয়ে সেখানে ঝিনুকের গুঁড়া মালিশ করলে দ্বিতীয়বার আর সেখানে চুল গজাবে না । আগুনে পোড়া স্থানের উপর ঝিনুকের গুঁড়া লাগানো খুবই উপকারী। ঝিনুকের কোনো পরিষ্কার অংশ ছোট শিশুর গলায় বেঁধে দিলে ওই শিশুর দাঁত অতি সহজে উঠবে। ঝিনুককে ঘষে এর সূক্ষ্ম অংশ নিদ্রিত বক্তির চেহারার উপর রাখা হলে সেই ব্যক্তি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ঘুমাতে থাকবে। আর যদি ঝিনুককে তরল পদার্থের সাথে মিশিয়ে নাকের উপর এর প্রলেপ দেওয়া হয়, তা হলে নাকের রক্ত পড়া বন্ধ হবে।

বাজপাখির ঔষধি গুণ

বাজের পিত্ত হয় না। বাজের মগজ যদি লিঙ্গের উপর মালিশ করা হয়, তবে যৌনশক্তি বেড়ে যায়। আবু ছারী দায়লামী ‘আইনুল খাওয়াস’ গ্রন্থে লিখেছেন: এর মগজ যদি কেউ কালো দাগে মালিশ হিসাবে ব্যবহার করে, তা হলে এটা তার কালো দাগ দূর করে শরীর উজ্জ্বল করে। গলায় ব্যথার জন্য এর মাশিল খুবই উপকারী।প্রাণীর ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা আসাধারন।

ভেড়ার ঔষধি গুণাগুণ

ভেড়ার গোশত পিত্তশূল ও পাগলামির জন্য উপকারী, বীর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং বিষের জন্য প্রতিষেধক; কিন্তু পাঠার গোশত অপেক্ষা বেশি গরম। এক বছর বয়সের ভেড়ার গোশত খুবই উত্তম। পাকস্থলির জন্য উপকারী। কিন্তু রাত্রে জাগরণকারীর জন্য ক্ষতিকর। তবে এর উপযুক্ত ঝোল দ্বারা এ ক্ষতির উপশম করা যায়। মাদী ভেড়ার গোশত ভালো হয় না। এতে দূষিত রক্ত তৈরি হয়। ছয় মাস বয়সের ভেড়ার গোশত অধিক খাদ্যযোগ্য।কিন্তু এতে অধিক গরম ও শ্লেষ্মা সৃষ্টি হয়। ভেড়ার গোশত সর্বপেক্ষা বসন্তকালে উত্তম হয়।

খাসী ভেড়ার গোশত অধিক শক্তিশালী হয়। ভেড়ার রক্ত গরম গরম থাকা অবস্থায় শ্বেত রোগের স্থানে মালিশ করলে এর রং পরিবর্তন হয়ে যায় এবং শ্বেত রোগ দূর হয়ে যায়। ভেড়ার তাজা কলিজা আগুনে পুড়ে তা গুঁড়া করে দাঁতে ঘষলে দাঁত পরিষ্কার ও চকচকে হয়। ভেড়ার শিং কোনো বৃক্ষের নিচে পুঁতে দেওয়া হলে গাছে ফলন বেশি হয়। যদি ভেড়ার পিত্ত মধুতে মিশিয়ে চোখে লাগানো হয়, তবে চোখের পানি পড়া বন্ধ হয়। এর হাড় ঝাউগাছের লাকড়ির সাথে পুড়িয়ে চেরাগ জ্বালাতে ব্যবহৃত গোলাপ তৈলে মিশিয়ে ভাঙা দাঁতে লাগানো হলে উক্ত দাঁত ঠিক হয়ে যায়। ভেড়ার পশম কোনো নারী নিজের নিম্নাঙ্গে লাগালে তার গর্ভপাত হয়ে যাবে। মধুর বোতলকে সাদা ভেড়ার পশম দ্বারা ঢেকে দেওয়া হলে পিঁপড়ার উপদ্রব হতে নিরাপদ থাকবে।

বিশেষ কিছু গুরুত্বপুর্ন আমল 
গুরুত্বপুর্ন দোয়া সম্পর্কে জানুন
আমল এর জন্য জরুরি দুরুদ শরীফ

ময়ূরের ঔষধি গুণাগুণ

ময়ূরের গোশত গুরুপাক ও রুক্ষ প্রকৃতির। জওয়ান ময়ূরের গোশত উত্তম এবং গরম পেটের জন্য উপকারী। ময়ূরের গোশত রান্না করার পূর্বে সিরকায় ভিজিয়ে নিলে এর ক্ষতিকর প্রভাব দূর হয়ে যায়। এর গোশত ভক্ষণ করলে কুপিত্ত তৈরি হয়। এটা গরম মেজাজের লোকদের জন্য খুবই
উপকারী। চিকিৎসকগণ ময়ূরের গোশত পছন্দ করেন না। কেননা এর গোশত অন্যান্য পাখির গোশতের তুলনায় শক্ত এবং দেরিতে হজম হয়।ময়ূর জবাই করলে অবশ্যই এর গোশত রেখে দিবে এবং পরের দিন বেশি করে জ্বাল দিবে। এর গোশত আরামপ্রিয় লোকদের না খাওয়াই উচিত।

ইবনে জাহর ময়ূরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখেছেন : ময়ূর কোনো বিষ মিশ্রিত খাদ্য দেখলে কিংবা এর গন্ধ শুঁকলে বেশ আনন্দিত হয় ও খুশিতে নাচতে থাকে। এ খুশির প্রভাব তার মধ্যে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাতের রোগী ময়ূরের পিত্ত গরম পানিতে ও শেকনজাবীনে মিলিয়ে পান করলে আরোগ্য লাভ করবে। হরমুস হতে বর্ণিত আছে, ময়ূরের পিত্ত সিরকার সাথে মিশিয়ে পান করা বিষাক্ত প্রাণীতে কাটা ব্যক্তির জন্য উপকারী।

কিন্তু ‘আইনুল খাওয়াস’ গ্রন্থের লেখক কোনো কোনো হেকিম এবং আতহুরাস হতে বর্ণনা করেছেন : কোনো ব্যক্তি ময়ূরের পিত্ত পান করলে সে পাগল হয়ে যাবে। আমি (আতহুরাস) তা পরীক্ষা করেছি। হরমুস বলেছেন: যদি ময়ূরের রক্ত লবণ ও আনজুরাতের মধ্যে মিলিয়ে পচন ধরার আশঙ্কাযুক্ত কোনো কঠিন জখমের উপর লাগানো হয়, তবে ওই জখম নিরাময় হবে। ময়ূরের পিত্ত মাড়িতে মলে দিলে দাঁত পড়ে যাবে। ময়ূরের হাড় পুড়িয়ে অবাঞ্ছিত লোমের উপর মালিশ করলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

হরিণের ঔষধি গুণাগুণ

ইবনে ওয়াহ্শিয়া বর্ণনা করেছেন, হরিণের শিং ছিলে গৃহের ভিতর এর ধোঁয়া দিলে সকল বিষাক্ত প্রাণী পালিয়ে যাবে। হরিণের জিহবা ছায়ায় শুকিয়ে মুখরা নারীকে খাওয়ালে মুখপিটানো বন্ধ হয়ে যাবে। হরিণের পিত্ত কানের ব্যথায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির কানে ফোঁটা ফোঁটা নিঃসৃত করলে তৎক্ষণাৎ তার ব্যথা নিরাময় হবে। হরিণের মগজ ও চামড়া শুকিয়ে পিষে শিশুকে আহারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে সে বুদ্ধিমান, মেধাবী, শুদ্ধভাষী এবং প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী হবে। হরিণের মেশক দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, চোখের পানি পড়া প্রতিরোধ করে এবং মন-মস্তিষ্কের জন্যও শক্তিদায়ক। এটা চোখের শুভ্রতাকে চমৎকার বানায়, দুর্বল দৃষ্টির জন্য উপকারী, বিষের প্রতিষেধক; কিন্তু এটা ব্যবহারে চেহারা হলদে-ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এ ছাড়া মেশক খাবারের সাথে ব্যবহার করলে মুখে দুর্গন্ধও সৃষ্টি হয়।

গর্ভ অবস্থায় কিভাবে নিজের যত্ন নিবেন

চড়ুই পাখির ঔষধি গুণাগুণ

চড়ুই পাখির গোশত গরম, শুষ্ক ও মুরগির গোশ্ত হতে অধিক শক্ত হয়। চড়ুই পাখির গোশত শীতকালে সবচেয়ে উত্তম ও চর্বিযুক্ত হয়। এর গোশত বীর্য ও হজমশক্তি বাড়ায়; কিন্তু মেদযুক্ত মানুষের জন্য এর গোশত ক্ষতিকর। অবশ্য বাদাম তৈলের দ্বারা এর ক্ষতিকর প্রভাব দূর হয়ে যায়। বৃদ্ধ ও নরম মেজাজী লোকদের জন্য এটা খুবই উপাদেয় । চড়ুই পাখির গোশত মিশ্র হলুদ রং পয়দা করে। মুখতার বিন আবদুন বলেছেন : এটার গোশত না খাওয়াই উত্তম। কেননা এর সাধারণ একটি হাড়ও কদাচ পেটে চলে গেলে এতে পিত্তথলিতে ও আঁতে চর্বি সৃষ্টি হয়। চড়ুই পাখির বাচ্চা কোনো ডিমের সঙ্গে মিশিয়ে খাগিনা বানিয়ে ব্যবহার করলে হজমশক্তি অনেক বেড়ে যায়। চড়ুই পাখির গোশতের ঝোল মন-মেযাজকে পরিচ্ছন্ন করে। এর গোশত হয় গুরুপাক।

বিশেষত যখন চড়ুই পাখি নেহাৎ দুর্বল হয়। গৃহচারী চর্বিযুক্ত চড়ুই পাখির গোশত সবচেয়ে ক্ষতিকারক। কোনো কোনো ডাক্তারের মতে চড়ুই পাখির মগজ সুন্দাব (বাজ সদৃশ পাতা বিশিষ্ট একপ্রকার দুর্গন্ধযুক্ত গাছের রসে ও সামান্য মধুতে মিশিয়ে মাথা ব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখমণ্ডলে লাগালে মাথা ব্যাথার উপশম হয়।

চড়ুই পাখির বিষ্ঠা থুথুর সাথে মিশিয়ে তরল করে কালো দাগের উপর লাগালে দাগ বিলকুল মুছে যাবে। এটা পরীক্ষিত একটি চিকিৎসা।চড়ুই পাখির মগজ সিরাজের সঙ্গে গলিয়ে মদ্যপানে অভ্যস্ত লোককে পান করানো হলে সে মদ্যপানে অনাগ্রহী হয়ে যাবে। এটাও পরীক্ষিত আমল । কাটাযুক্ত চড়ুই লবণে মেখে ভেজে ভক্ষণ করলে কিডনীর পাথর চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়। মেহরারেস বলেন : যদি চড়ুই পাখি জবাই করে এর রক্ত মসূরের গুঁড়ায় মিশিয়ে এর বড়ি বানিয়ে শুকিয়ে নেওয়া হয়, তবে এর ব্যবহার হজমশক্তিকে খুবই বৃদ্ধি করে। আর যদি তন্মধ্যে কোনো বড়িকে জায়তুন তৈলের সাথে মিশিয়ে নিম্নাঙ্গে মালিশ করা হয়, তা হলে লিঙ্গ খুবই মজবুত ও শক্ত হয়।

মহান আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিকুলের প্রাণী উদ্ভিদ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আর এই মানুষের জন্যই পৃথিবীতে সবকিছুর এত আয়োজন। উদ্ভিদ এবং প্রাণী যেমন ঔষধ তৈরিতে অবদান আছে ঠিক তেমনি ঠিকঠাকভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে এগুলোর উপকারের চেয়ে অপকারী বেশি হবে। তাই ঔষধি গুনাগুন যেমন আছে তেমনি ক্ষতিকর দিক আছে আমরা বুঝে শুনে প্রয়োগ করব যেন ক্ষতি না হয়।