তাহাজ্জুদ নামাযের ফযীলত ও গুরুত্ব

তাহাজ্জুদ নামাযের ফযীলত

তাহাজ্জুদ নামায়ের ওয়াক্ত রাত দ্বিপ্রহরের পর হইতেই শুরু হয় এবং সোবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। যত রকম নফল নামায আছে তন্মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাযই শ্রেষ্ঠ। এই নামাযের ফযীলত বর্ণনাতীত। ওলামায়ে কেরাম এই নামাযের রাকআতের ব্যাপারে একমত নহেন। ইহার কারণ রেওয়ায়াতের বিভিন্নতা। কোন রেওয়ায়াতে এই নামায চারি রাকআত রেওয়ায়াতে আট রাকআত, কোন কোন রেওয়ায়াতে বার রাকআত পর্যন্ত দেখা যায়।হাদীস শরীফের মর্মে জানা যায়, কখনো কখনো রাসূলে করীম (সাঃ) এই নামায চারি রাকআত কখনো আট রাকআত কখনো বার রাকআত পর্যন্ত আদায় করিতেন। দুই দুই রাকআতের নিয়তে পড়াই উত্তম। ইহাতে সূরা-কেরাআত পড়া সম্পর্কে কয়েক রকম অভিমত আছে।

কোন কোন বুযুর্গ ইহার প্রথম রাকআতে সূরা ফাতেহার পর সূরা এখলাস ১২ বার, পরবর্তীতে প্রতি রাকআতে ঐ সংখ্যা কমাইতে কমাইতে একেবারে শেষ রাকআতে মাত্র একবার পাঠ করেন। কাহারও কাহারও মতে এই নামাযের প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে একবার কারয়া সূরা এখলাস পড়াই বিধেয়। কেহ কেহ সূরা ফাতেহার সাথে প্রতি রাকআতে নিতবার সূরা এখলাস পড়িয়া আলামনাশরাহ, কেহ কেহ একবার করিয়া আয়াতুল কুরসী পাঠ করা উত্তম মনে করেন। আবার কেহ কেহ ইহার প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত অর্থাৎ ‘‘আমানার রাসূল” হইতে আ’লাল কাওমিল কাফেরীন পর্যন্ত পড়িয়া থাকেন।

ইসলামে নামাযের গুরুত্ব
তালাকের মাসাআলা

বিভিন্ন কিতাবে এরূপ বর্ণিত আছে যে, পূর্ববর্তী যুবুর্গ ও মাশায়েখ এই নামাযের প্রত্যেক রাকআতে সূরা মুযযাম্মিল পাঠ করিতেন। ওলামায়ে কেরামের কেহ কেহ এইরূপ মত প্রকাশ করেন, যে, তাহাজ্জুদের বার রাকআত নামাযে অন্যূন একশত হইতে দুই শত আয়াত কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। উপরোক্ত বিভিন্ন নিয়ম যেহেতু সাধারণ লোকের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়; সুতরাং যেসকল সূরা তাহাদের পক্ষে সহজ ও সম্ভব, তাহারা সেইসব সূরা দিয়াই এই নামায আদায় করিবেন।

যাহারা এই নামায নিয়মিত আদায় করেন তাহারা এশার নামাযের সাথে বেতের আদায় না করিয়া তাহাজ্জুদ আদায় করিয়া পড়িবেন। কারণ, রাত্রের যেকোন নামাযের মধ্যে বেতের নামায হইল সর্বশেষ নামায। ইহার পরে আর কোন নামায নাই। সুতরাং যত রকমের নফল নামায আছে তাহা বেতেরের পূর্বেই পড়িতে হয়। অবশ্য রমযান মাসে এই নিয়ম প্রযোজ্য নহে। কারণ, তখন তারাবীর সাথে বেতেরও জামাআতে আদায় করিতে হয়। সুতরাং রমযান মাসে তাহাজ্জুদ নামায বেতেরের পরেই আদায় করিতে হয়।

আর যাহারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করেন না,তাহারা এশার সাথে সাথে বেতের আদায় করিবেন। কারণ, তাহাজ্জুদের পরে আদায় করিবে বলিয়া নিদ্রা গেলে হয়ত নিদ্ৰা ভঙ্গ হইল না, তখন তাহাজ্জুদ নফল নামায বিধায় তরক হইলেও তেমন ক্ষতি হয় না, কিন্তু সেই সঙ্গে বেতেরের ওয়াজিব তরক হইয়া যায়, ইহা ভয়ানক গোনাহর কারণ হইয়া পড়ে। তাহাজ্জুদ নামায লোকজনের মধ্যে প্রকাশ্যে না পড়িয়া নির্জনে আদায় করিলে অধিক সওয়াব হয়।

রাসূলে করীম (সাঃ) এই নামাযকে ফরয নামাযের মত গুরুত্ব সহকারে আদায় করিতেন। কোন দিন তরক করেন নাই। ওযরবশত কোন দিন পড়া না, হইলে ফরয নামাযের মত তিনি উহার কাযা আদায় করিতেন। ওলামায়ে কেরামের মতে, তাহাজ্জুদ নামায রাসূলে করীম (সাঃ)-এর উপর একটি ব্যক্তিগত খাস ফরয ছিল। কাজেই তিনি এই নামাযের প্রতি এরকম গুরুত্ব দিতেন। অবশ্য রাসূলে করীম (সাঃ)-এর উম্মতগণের প্রতি উহা ফরয ওয়াজিব নহে।এই কথার দলীলস্বরূপ কোরআন পাকের নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ উল্লেখ করা যায়। আল্লাহ তাআলা তাঁহার প্রিয় নবী (সাঃ)-কে লক্ষ্য করিয়া এরশাদ ফরমাইয়াছেন :

উচ্চারণ : ফাতাহাজ্জাদ বিহী নাফেলাতাল লাকা।

অর্থ : হে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)! আপনি রাত থাকিতে উঠিয়া তেলাওয়াতের দ্বারা তাহাজ্জুদ আদায় করুন। ইহা আপনার জন্যই অতিরিক্ত করা হইয়াছে। তাহাজ্জুদ নামাযকে সেরাজুল কুবুর নামেও আখ্যায়িত করা হয়। সেরাজুল কুবুর অর্থ কবরের বাতি। এই নামকরণের কারণ, হাদীস শরীফে বর্ণিত হইয়াছে, তাহাজ্জুদ নামায আদায়কারীদের কবর ৭০ গজ প্রশস্ত এবং সর্বদা আলোকিত থাকে।

শবে কদর এর নামাযের ফযিলত
গুরুত্বপুর্ন কিছু দোয়া

এই হাদীসে রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ ফরমাইয়াছেন, তোমরা রাত্রের নামায অর্থাৎ, তাহাজ্জুদের নামায আদায় কর। কেননা, উহা নেককার বান্দার তরীকা। অন্য হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, ফরয নামাযের পর রাত্রের মধ্যভাগে তাহাজ্জুদ নামাযই হইল ফযীলতের নামায। অর্থাৎ, ফরয নামাযের পরে অন্যান্য যাবতীয় নামাযের মধ্যে ফযীলতের দিক হইতে তাহাজ্জুদ নামাযই শ্রেষ্ঠ। রাসূলে করীম (সাঃ) নিম্নোক্ত নিয়মে তাহাজ্জুদ আদায় করিতেন। রাত্রে জাগরিত হইয়া অযু করত প্রথমে নিম্নের দোআটি পাঠ করিতেন ঃ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বা জিব্রাঈলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইস্রাফীলা. ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাতি আনতা তাহকুমু বাইনা ইবাদিকা ফীমা কানু ফীহি ইয়াখতালিফুন, ইহদিনী বিমা ইখতালাফতু ফীহি মিনাল হাককি বিইযযিকা ইন্নাকা তাহদী মান তাশাউ ইলা সিরাতিম মুসতাকীম। উল্লিখিত দোআ পাঠ করিয়া নিম্নোক্ত কালেমাসমূহ প্রত্যেকটি দশবার করিয়া পড়িতেন।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন দীকিদ দুনইয়া ওয়া মিন দীকি ইয়াওমিল

1 thought on “তাহাজ্জুদ নামাযের ফযীলত ও গুরুত্ব”

Leave a Comment