কা'বা ঘর নির্মাণ এর ইতিহাস

 

কা’বা ঘর নির্মাণ এর ইতিহাস সম্পর্কে জানব

মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান হল কাবা। শরীফ আমাদের প্রধান ইবাদত নামাজ আমরা আদায় করি কাবা অভিমুখী হয় কাবা শরীফ জমিনে নির্মিত সর্বপ্রথম ঘর। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম মানুষের জন্য নির্ধারিত ঘর সেটাই যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা বিশ্বের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতপূর্ণ।

কাবাঘর মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। পৃথিবী সৃষ্টির প্রায় 2 হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলা কাবাঘর সৃষ্টি করেন। আদম আলাই সালাম কাবাঘরের নির্মাণ কাজ করেছিলেন এবং তাওয়াফ করেছিলেন। ইতিহাসে এমনও কথা এসেছে কাবা ঘর পুনঃ নির্মাণ করার কথা ইতিহাসে আছে।

বর্ণিত আছে, হযরত ইবরাহিম আ. কা’বা ঘর নির্মাণের জন্য শামদেশ হতে রওয়ানা হন। তার সাথে ছিল সাকিনা ও ছুরাদ। ছুরাদ কাবা ঘরের স্থান আর সাকিনা তার পরিমাণ নির্ধারণের কাজে নিয়োজিত ছিল। সুতরাং তিনি লক্ষ্যস্থলে এসে পৌছুলে সাকিনা কা’বা ঘরের স্থানে গিয়ে বসে পড়ল এবং ডাক দিল- হে ইবরাহিম! যেস্থান পর্যন্ত আমার ছায়া পড়েছে, আপনি সে স্থান পর্যন্ত গৃহ নির্মাণ করুন।

ইউটিউব প্রিমিয়াম কি

একদল মুফাস্সিনে কিরাম বলেন :যে ভূখণ্ডে কা’বা ঘর অবস্থিত, সে ভূমি আল্লাহ তায়ালা অন্যান্য ভূমি হতে দুই হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি করেছেন।এ ভূ-ভাগটি পানির উপর একটি ফেনার মতো ভাসছিল। তারপর আল্লাহ তায়ালা তার নিচে মাটি বিছিয়ে দিলেন। হযরত আদম আ. আল্লাহ তায়ালার হুকুমে পৃথিবীতে এসে পৌছুলে তাঁর মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হল। তিনি আল্লাহ পাকের নিটক ফরিয়াদ করলেন। আল্লাহ তায়ালা তার প্রবোধের জন্য ভূপৃষ্ঠে বায়তুল মামুরকে নাযিল করলেন। এটা মূলত জান্নাতে ইয়াকুত পাথরের তৈরি ছিল। তাতে সবুজ জবরজদ পাথরের দুটি দরজা লাগানো ছিল—একটি পূর্ব দিকে; অপরটি পশ্চিম দিকে। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আ.-কে বললেন :

আমি আপনার জন্য বায়তুল মামুরকে অবতীর্ণ করেছি। এটি আপনি এমনভাবে তওয়াফ করুন, যেভাবে আকাশে আমার আরশ তওয়াফ করতেন। এর সামনে এমনভাবে নামায আদায় করুন, যেভাবে আদায় করতেন আমার আরশের নিকট । সুতরাং হযরত আদম আ. আল্লাহ পাকের হুকুমে পায়ে হেঁটে হিন্দুস্তান থেকে মক্কা শরিফের দিকে রওয়ানা হলেন। তাঁকে মক্কার পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা একজন ফিরিশতা নিযুক্ত করলেন। মক্কা শরিফ পৌছে তিনি সর্বপ্রথম হজ্বের অনুষ্ঠানাদি পালন করলেন।এরপর তাঁর সাথে ফিরিশতাগণ এসে সাক্ষাৎ করলেন। বললেন, হে আদম আ.! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করেছেন। আমরা আপনার দুই হাজার বছর পূর্বে এ ঘর তাওয়াফ করেছি। বাইতুল মামুরের পর আল্লাহ তায়ালা হাজরে আসওয়াদ নাযিল করলেন। তখন তা দুধের মতো সাদা চকচকে ছিল। কিন্তু অন্ধকার যুগে ঋতুবতী নারীদের স্পর্শে এটা কালো হয়ে যায়।

কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, হযরত আদম আ. ভারত অঞ্চল (শ্রীলঙ্কা) থেকে মক্কা গমন করে চল্লিশবার হজ্ব করেছেন। বায়তুল মামুর নূহ আ.-এর তুফান পর্যন্ত পৃথিবীতে ছিল। এরপর আল্লাহ তায়ালা এটি চতুর্থ আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন আর হাজরে আসওয়াদকে হযরত জিব্রাঈল আ.-এর মাধ্যেমে ‘আবু কুবাইস’ পাহাড়ে রেখে দিয়েছিলেন। যেন এটাতে বানের আঘাতে না লাগে। হযরত ইবরাহিম আ.-এর সময় পর্যন্ত বায়তুল হারামের স্থান খালি ছিল। বানের পর যখন তার সময় আসল এবং হযরত ইসমাইল আ.-এর জন্ম হল, তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহিম আ.-কে কা’বা ঘর নির্মাণের হুকুম দিলেন।

তিনি আল্লাহ পাকের দরবারে আরয করলেন, আমায় তার স্থানটি বলে দিন। মহান আল্লাহ স্থান বলে দেওয়ার জন্য সাকিনাকে পাঠালেন।সাকিনা একটি দ্রুতগামী প্রাণহীন বায়বীয় দেহ। এর সাপের মতো দুটি মাথা আছে। কারো কারো ধারণামতে এটা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ উজ্জ্বল একটি ঘূর্ণিবায়ু। এর মাথা ও লেজ হুবহু বিড়ালের মাথা ও লেজের মতো। এর একটি বাহু জবরজদ পাথরের; অন্যটি মারওয়ারিদ পাথরের। এর চোখে চমক রয়েছে। হযরত আলী রাযি. বলেন, সাকিনা একটি তীক্ষ্ণ বাতাস। এর মাথা দুটি আর মুখমণ্ডল মানুষের মতো। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহিম আ.-কে নির্দেশ করলেন— ‘যেখানে গিয়ে সাকিনা স্থির হয়ে যাবে, সেখানে কা’বা ঘর নির্মাণ করবে।’ সুতরাং হযরত ইবরাহিম আ. সাকিনার পিছনে পিছনে চললেন। অবশেষে এটা কা’বা ঘরের স্থানে গিয়ে কুণ্ডুলী পাকিয়ে বসে পড়ল। এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা আসল, এটুকু স্থানেই কাবাগৃহ নির্মাণ করুন কম-বেশি করবেন না।

মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব ও ইতিহাস

অপর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তায়ালা হযরত জিব্রাইল আ.-কে প্রেরণ করলেন। তিনি এসে কা’বা ঘর নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করে দেন। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা একটি মেঘখণ্ড প্রেরণ করলেন। তা চলতে লাগল। হযরত ইবরাহিম আ.-ও এর ছায়ায় চলতে লাগলেন। অবশেষে ওই মেঘখণ্ডটি কাবাগৃহের স্থানে গিয়ে পৌঁছয়। সে-সময় দৈবাৎ আওয়াজ এল—যে পর্যন্ত এর ছায়া পড়েছে, তাতে কম-বেশি না করে এখানেই কা’বা গৃহ নির্মাণ করুন।কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, স্থান সনাক্ত করেছিল ‘ছুরাদ’ (লটুরা)। যেমনটি পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত ইবরাহিম আ. কা’বা ঘর নির্মাণ করলেন। হযরত ইসমাঈল আ. পাথর কুড়িয়ে একত্র করলেন। বাইতুল্লাহর জন্য নিম্নোক্ত পাহাড় থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয়েছিল— ১. সীনা পর্বত। ২. জিনা পর্বত। ৩. যায়তুন পর্বত। ৪. সিরিয়ার লুবনান পর্বত। ৫. জুদী পর্বত। ৬. মক্কার হেরা পর্বত। এ পর্বতের পাথর দ্বারা ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল । বাকি পাহাড়গুলোর পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছিল দেয়াল।

হাজরে আসওয়াদ স্থাপন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ পৌছুলে হযরত ইবরাহিম আ. হযরত ইসমাইল আ.-কে বললেন : একটি উত্তম পাথর নিয়ে আস!যাতে মানুষের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকে। সুতরাং হযরত ইসমাইল আ. যথেষ্ট খুঁজে একটি উত্তম পাথর আনলেন। হযরত ইবরাহিম আ. বললেন : এটা হতেও উত্তম পাথর আন! যেন মানুষের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকে। হযরত ইসমাইল আ. অন্য একটি পাথর সংগ্রহের জন্য যাচ্ছিলেন। এমন সময় ‘আবু কুবাইস’ পাহাড় হতে আওয়াজ আসল, হে ইবরাহিম! আমার কাছে একটি আমানত আছে। এটা আপনি সংগ্রহ করুন। সুতরাং তিনি পাহড়ে গমন করে হাজরে আসওয়াদ নিয়ে এলেন এবং ওখানে সেটিই স্থাপন করলেন।

আরেক বর্ণনায় আছে, সর্বপ্রথম কা’বা শরিফ হযরত আদম আ. নির্মাণ করেন। হযরত ইবরাহিম আ. সেই ভিত্তির উপর পুনঃনির্মাণ করেছিলেন।কেননা সেটি হযরত নূহ আ.-এর তুফানের সময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল আল্লাহই ভালো জানেন।