কিভাবে কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ করবো?

কিভাবে কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ করবো?( Maintenance of Computer)

কম্পিউটার অনেক দিন কার্যক্ষম রাখতে এর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। পার্সোনাল কম্পিউটার সা ডেস্কটপ, ল্যাপটপসহ সকল ধরনের কম্পিউটার এর সঠিক ব্যবহার, পরিচর্যা এবং ট্রাবলশুটিং করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ইন্সটল এবং আন-ইন্সটল করাকে কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ বলা হয়।

সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ (Software Maintenance)

কম্পিউটার সফটওয়্যারের বিভিন্ন সমস্যার কারণে কম্পিউটার ধীরগতিসম্পন্ন হয়; এমনকি অকেজেও হয়ে যেতে পারে। সফ্টওয়্যার হালনাগাদ ও আপডেটের মাধ্যমে কম্পিউটারকে সংরক্ষণ ও কাজের
গতি ঠিক রাখা যায়। যেমন:

কম্পিউটারকে সচল ও গতিশীল রাখার জন্য মাঝে মাঝে রেজিস্ট্রি ক্লিন আপ সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে হয়। যদি কেউ রেজিস্ট্রি ক্লিন আপ ব্যবহার না করে তবে কম্পিউটার যন্ত্রটি ঠিকভাবে কাজ করবে না এবং অনেক সময় বিরক্তির কারণ হতে পারে। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় অনেক টেম্পোরারি ফাইল তৈরি হয়। অনেক দিন এ ফাইলগুলো না মুছে দিলে হার্ডডিস্কের অনেক জায়গা দখল করে থাকে এবং এই অস্থায়ী ফাইলগুলো কাজের গতি কমিয়ে দেয়। সেজন্য আমাদের উচিত, সফ্টওয়্যারের সাহায্য নিয়ে এই অস্থায়ী ফাইলগুলো ডিলিট করা বা মুছে দেয়া।

তখন কোনো ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহারকালে যখন কোনো ওয়েব সাইট ভিজিট করেন, ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজারে ওয়েব সাইট প্রেরিত ক্ষুদ্র তথ্যপূর্ণ কিছু টেক্সট জমা হয়। ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত ক্ষুদ্র তথ্যপূর্ণ এই টেক্সটকে Cookie বলে। পরবর্তীকালে ব্যবহারকারী পুনরায় একই ওয়েব সাইট ভিজিট করলে Cookie এর সাহায্যে সহজেই ওয়েব সাইটটির সর্বশেষ অবস্থায় ব্যবহার শুরু করতে পারেন। এভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ফলে ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজারের ক্যাশ মেমরিতে অনেক টেম্পোরারি ফাইল ও Cookie জমতে থাকে। এতেও কম্পিউটারের কাজের গতি হ্রাস পায়। প্রতিদিন সম্ভব না হলে কিছুদিন পরপর ক্যাশ মেমোরি পরিস্কার করতে হয়।

কাজ করার গতি বজায় রাখার জন্য প্রায় সব ব্যবহারকারী ডিস্ক ক্লিনআপ ও ডিস্ক ডিফ্রাগমেন্ট করে থাকে। এন্টিভাইরাস, এন্টিস্পাইওয়্যার ছাড়া আইসিটি ডিভাইস ব্যবহার করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এটিএকটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি যার মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহারকারীগণ তাদের যন্ত্রে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।

চ্যাট জিটিপি মানুষের ভাষা বুঝতে পারে
ইউটিউব প্রিমিয়াম কি

ম্যালওয়ার (Malware)

মালওয়ার এক ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার (malicious software) যেগুলো তৈরিই করা হয় কম্পিউটারের ক্ষতি করার জন্য। বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার রয়েছে। যেমন-

  1. ভাইরাস (Virus)
  2. স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাহ (Self executed),
  3. সংক্রমণ (Self Extracted),
  4. নিজস্ব সংখ্যাবৃদ্ধি (Self Replicated) করে।

প্রখ্যাত গবেষক ফ্রেড কোহেন এর নামকরণ করেন VIRUS (Vital Information Resource Under Seize)। কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারকে অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য এবং অস্বস্তিদায়ক কাজ করতে বাধ্য করে। যেমন-কোন প্রোগ্রাম রান করতে বেশি সময় নেয়, কোন ফাইল ওপেন করতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নেয়,

স্পাইওয়্যার (Spyware) ব্যবহারকারীর উপর নজরদারি করে এবং ব্যবহারকারীর গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করে। যেমন- ইসরায়েলি সাইবার আর্মস সংস্থা (NSO)’র একটি স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’।
.
এডওয়্যার (Adware) ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই অযাচিত বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে এবং গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে।
.
রানসামওয়্যার (Ransomware) ডিভাইসের হার্ড ড্রাইভের সকল ফাইলকে এনক্রিপ্ট করে বা ব্যবহারকারীর সিস্টেমটি ব্লক করে ফেলে এবং মুক্তিপণ (Ransome) দাবী করে। যেমন- ২০১৭ সালের মে WannaCry ransomware দ্বারা বিশ্বব্যাপী সাইবার আক্রমণ হয়েছিল।
.
ওয়ার্ম (Worm) নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরিতে সক্ষম। ওয়ার্ম নিজে থেকেই নেটওয়ার্ক থেকে নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারকে আক্রান্ত করে। অন্যদিকে, কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহারকারীর হস্তক্ষেপ ছাড়া ছড়িয়ে পড়তে পারে না।
.
ট্রোজান হর্স (Trojan horses) ব্যবহারকারীকে আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভ্রান্ত করে। ছদ্মবেশে অন্য সফটওয়্যারের সাথে লুকিয়ে থাকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সম্পূর্ণ ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে।

কী-লগার (keylogger) ব্যবহারকারী কখন কোন কী (কীবোর্ডের সুইচ) প্রেস করছে তা গোপনে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করে রাখে।

কিভাবে নিবেন চুলের যত্ন
হৃদ রোগের ঝুকি কমান সুস্থ থাকুন
বিলগেটস এর জীবন কাহিনী

সাইবার অপরাধ (Cyber Crime )

সাইবার অপরাধ বলতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে অপরাধ করা হয়, তাকেই বোঝানো হয়। খুব সাধারণ অর্থে সাইবার অপরাধ হলো যে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ যার মাধ্যম বা টার্গেট উভয়ই হলো কম্পিউটার। তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, প্রতারণা, ব্ল্যাক মেইল, অর্থ চুরি ইত্যাদি তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হলে, তাকে সাইবার ক্রাইম বলে।

হ্যাকিং (Hacking)

হ্যাকিং (Hacking) : সাধারণত অনুমতি ব্যতীত কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে কম্পিউটার ব্যবহার করা অথবা কোনো কম্পিউটারকে মোহচ্ছন্ন করে তার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়াকে হ্যাকিং বলে। যে হ্যাকিং করে তাকে হ্যাকার (Hacker) বলে। হ্যাকিং বৈধ এবং অবৈধ হতে পারে। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের সিস্টেমের সিকিউরিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হ্যাকার নিয়োগ করে। এই নিয়োগপ্রাপ্ত হ্যাকারদের (হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার) কাজকে বৈধ হ্যাকিং বলে। এরা সিস্টেম সিকিউরিটি চেক করে কিন্তু সিস্টেমের কোনো ক্ষতি করে না। যেমন; UNIX সিস্টেম চেক করার
জন্য অনেক বৈধ হ্যাকার আছে। অবৈধভাবে যারা হ্যাকিং করে তাদের ক্রেকার (Craker)ও বলা
হয়।

ব্লাক হ্যাট হ্যাকার বা ক্রেকাররা

ইন্টারনেট এবং অন্যান্য নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডেটা চুরি অথবা নষ্ট করে দেয়। পৃথি বীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন হ্যাকার গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। যেমন :

  • Cyber 71 (বাংলাদেশ), BD
  • Black Hat
  • Hackers
  • (বাংলাদেশ), Cozy Bear (রাশিয়া),
  • Turla (রাশিয়া), Chaos Computer
  • Club (জার্মানি), DCLeaks
  • (আমেরিকা), Honker Union (চীন),
  • Ghost Squad Hackers: GSH (ভারত), Anonymous (অজ্ঞাত),
  • Legion Hacktivist
  • Group ইত্যাদি।
  • kala
  • WikiLeaks

উইকিলিকস একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা যা গোপন নথি প্রকাশের জন্য বিখ্যাত। সংস্থাটির এর প্রধান নির্বাহী জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ । ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে অজ্ঞাত হ্যাকাররা ভূয়া ট্রান্সফার ব্যবহার করে SWIFT (Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication) এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে ১০ কোটি ১০ লক্ষ ডলার হাতিয়ে নেয়। SWIFT – Society for Worldwide InterbankFinancial Telecommunication) তথ্য আদান প্রদানের একটি সিকিউরড মাধ্যম।

সাইবার চুরি (Cyber Theft)

দুই ভাবে ঘটতে পারে। যথা- ডেটা চুরি (DataTheft) এবং ব্যক্তি পরিচয় চুরি (Identify Theft)। কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমতি ব্যতীত ইনফরমেশন কপি আহরণ করাকে ডেটা চুরি বলা হয়। পক্ষান্তরে এক ব্যক্তির পরিচয় ব্যবহার করে অন্য কোনো ব্যক্তি কিছু ক্রয় বা অন্য কোনো কর্মকাণ্ড করে তার দায়ভার প্রথমোক্ত ব্যক্তির উপর চাপানোকে ব্যক্তি পরিচয় চুরি বলে।

প্লেজিয়ারিজম (Plagiarism) : অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে উপস্থাপন বা প্রকাশ করাকেই বলা হয় প্লেজিয়ারিজম। অর্থাৎ তথ্যসূত্র উল্লেখ ব্যতিত কোনো ছবি, অডিও, ভিডিও এবং তথ্য ব্যবহার করা অন্যায় কাজ ও অপরাধ হলো প্লেজিয়ারিজম।