বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।
বিশাল বিশ্বের আয়োজন
মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারই এক কোণ।
সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণ বৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে-’ রবীন্দ্রনাথ
মেলা মিলিয়ে দেয়-মানুষে মানুষে, জিনিসে জিনিসে, দেশে দেশে। মেলা আবার চিনিয়েও দেয় শিল্প-সংস্কৃতি- সমাজকে। তবে মেলা যেমন নানা জাতের, তার পৃষ্ঠপোষকরাও তেমনি আবার নানান প্রবণতার। বাণিজ্য মেলায় বিষয়নিষ্ঠদের এবং বই মেলায় জিজ্ঞাসুদের ভিড়। বই ভালোবাসে না এমন মানুষ খুব কমই আছে, বই মানুষের মন কে করে উদার।কবি সাহিত্যিকদের প্রান লুকিয়ে থাকে বই এর মধ্যে।বই মেলার প্রচলন আগে ছিল না।
কম্পিউটার রক্ষনাবেক্ষন করবেন কিভাবে জেনে নিন
জাপানি মেয়েদের রুপের গোপন রহস্য জেনে নিন
হযরত আনাস রাযি আঃ এর জিবন কাহিনী সম্পর্কে জানুন
কিন্তু সম্প্রতি তা নিয়ে প্রভূত উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষণীয়। ব্যাপারটি নবাগত এবং বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই বিদ্যোৎসাহীদের সন্ধানী দৃষ্টি আজ এর ওপর নিবন্ধ। প্রতিবছর আমাদের দেশে একুশে ফেব্রুয়ারির বই-মেলাটি বেশ তোড়জোড় ও ঘটা করে হয়ে থাকে।এছাড়া, অন্যান্য সময়ও রাজধানী শহর ও মফঃস্বল শহরে বই মেলার আয়োজন হয়ে থাকে।
বইমেলার প্রচলন :
১৮০২ সালে প্রথম নিউইয়র্ক শহরে বইমেলার আসর বসে। উদ্যোক্তা ছিলেন ম্যাথু কেরি। ১৮৭৫ সালে একশ জন প্রকাশক মিলে নিউইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়োজন করলেন বইমেলার। ত্রিশ হাজার গ্রন্থ ওই মেলায় প্রদর্শিত হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে শুরু হয় ফ্রাঙ্কফুর্টের বৃহৎ বইমেলা। সেখান থেকেই আধুনিক বইমেলার স্মরণীয় শুভযাত্রা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বের দেশে দেশে বইমেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সংস্কৃতির নানা উপকরণের মধ্যে এখন বইমেলা হয়ে উঠেছে অন্যতম আধুনিক উপকরণ। বইমেলা হল আন্তর্জাতিকজ সংস্কৃতি-বিকাশের অন্যতম ক্ষেত্র।
বাংলাদেশে বইমেলা :
বাংলাদেশের বইমেলা একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে মুক্তধারা নিজেদের উদ্যোগে প্রথম বইমেলা চালু করে। বাংলা একাডেমী প্রাতিষ্ঠানিক বইমেলার আয়োজন করে ১৯৭৮ সাল থেকে। ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বইমেলার নাম দেয়া হয় ‘একুশে বইমেলা’। সরকারি উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে আয়োজিত ঢাকা বইমেলা জনপ্রিয়তা অর্জন করে। উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় গন্ধকেন্দ্র বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে ঢাকা বইমেলাকে আন্তর্জাতিক মেলার পর্যায়ে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে।
গর্ভ অবস্থায় কি কি করবেন
প্রী টাইম বাথ সম্পর্কে জানুন
কাবা ঘর নির্মানের ইতিহাস
বইমেলার তাৎপর্য :
গ্রন্থ মানব-সভ্যতার অন্যতম প্রাণসত্তা। গ্রন্থ মানুষে মানুষে প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করে। গ্রন্থই মানুষের অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের সেতুরন্ধন, শুভবুদ্ধি জাগরণের চাবিকাঠি। গ্রন্থপাঠ মানুষের এক দুর্নিবার নেশা।এই নেশাতেই মানুষ ছুটে যায় বইমেলায়। বইমেলা দেশ ও জাতির অগ্রগতির হাতিয়ার। কূপমণ্ডূক অন্ধ ধারণা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতেই এর আবির্ভাব। বইমেলা এক মহৎ অনুভবেরই প্রেরণাস্থল।
এখানে এসে মানুষ এক অনাবিল আনন্দস্রোতে অবগাহন করে। মুছে নেয় প্রতিদিনের সংসার মালিন্য। আহরণ করে নতুন প্রাণশক্তি। বইমেলায় শুধু বই কেনার আগ্রহই নয়, আছে মেলারও এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ।আগ্রহ, সুযোগ, প্রকাশক : বই-মেলা বইয়ের প্রতি পাঠকদের আকর্ষণ বাড়ায়। মেলায় যাওয়া উপলক্ষে বই কেনার বিশেষ তাগিদ অনুভব করে অনেকেই ।
মেলা শেষ হবার পরও বই কেনার মানসিকতা অনেককে প্রভাবিত করে। ফলে অনেকেই আরো বেশি করে বই কিনতে সচেষ্ট হয়। এছাড়া, বই-মেলায় ক্রেতারা ঘুরেফিরে হাতে নিয়ে বই দেখতে পারে। মেলায় বহু বই ডিসপ্লে করা হয়ে থাকে। এতে দেখার সুবিধা। উপরন্তু দূর-দূরান্ত থেকে বহু প্রকাশক আসেন বই-মেলায়। আসে নানা ধরনের বই। ফলে অচেনা-অজানা অনেক বইয়ের সন্ধান মেলে; রুচি ও ক্ষমতা অনুযায়ী সেগুলো কেনাও অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়।
অন্তত কিন্তু মেলার সুবাধে সে সব বইয়ের সঙ্গে ক্ষণিক সময়ের জন্য হলেও পরিচয় মেলে।নিজেদের ও পাঠকদের সঙ্গে ভাব বিনিময় : প্রকাশকরা মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতাদের কাছে সরাসরি বই বিক্রির সুযোগ পান বলে তাঁরা নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। বই-মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকাশক নিজেদের মধ্যে ভাব-বিনিময়ের সুযোগ পান। বই প্রকাশ-সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যাদি নিয়ে আলোচনারও অবকাশ পান। এছাড়া, পাঠকদের চাহিদা সরাসরি লক্ষ করে নতুন নতুন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারেন।
মেলার পরিবেশ :
বই মেলার প্রাঙ্গণে নানা ধরনের প্রকাশক স্টল খোলেন। এক-একটি প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা থাকেএক এক ধরনের বইয়ের প্রতি। ফলে ক্রেতারা তাঁদের অভিরুচি অনুযায়ী স্টল নির্বাচন করে বই কিনতে পারে। এছাড়া, মেলা—প্রাঙ্গণের সীমাবদ্ধ পরিসরে অসংখ্য রকম বইয়ের সমাবেশ ঘটায় ক্রেতাদের পক্ষে অল্প আয়াসে নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী বই সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।বইয়ের দোকানে গতানুগতিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রায়ই বই কেনার সময়ে প্রতিকূলতার সৃষ্টি করে। অপরদিকে, বই- মেলার সুরুচিকর ও মনোরম পরিবেশ ক্রেতাদের সৌন্দর্য-পিপাসাকে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বই কেনার ব্যাপারে বাড়তি উৎসাহ জোগায়।
এছাড়া বই-মেলায় মূল্যের দিক থেকে ক্রেতাদের কিছু ছাড় বা কমিশন দেয়া হয়।পারস্পরিক ভাব-বিনিময় : বই মেলার উন্মুক্ত পরিবেশে ক্রেতাদের মধ্যে ভাব-বিনিময়েরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।তাঁরা তাঁদের পছন্দ-অপছন্দ, ভাল লাগা মন্দ লাগা ও কেনা-কাটার উপকরণ নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করতে। উজ্জীবিত করে। তাছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে লেখক ও প্রকাশকদের সমাবেশ ক্রেতাদের উৎসাহিত করে। উপরন্তু মেলার বর্ণাঢ্য পরিবেশ বড়দের বই কেনার আগ্রহে যেমন ইন্ধন যোগায়, ছোটদের কল্পনাকেও তেমনি।লেখক ও প্রকাশকদের সঙ্গে ক্রেতাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের সুযোগ করে দেয়
সংস্কৃতির লালন ও পৃষ্ঠপোষকতায় একুশের বইমেলা পালন করে আসছে অগ্রণী ভূমিকা। ফলে কর্মব্যস্ত ও ক্লান্ত মানুষ : কর্মব্যস্ত মানুষ, যারা এমনিতে বই কিনতে যাবার সময় পায় না, তাঁদেরও অনেকেই বই- মেলায় গিয়ে হাজির হয়। বইয়ের টানের সঙ্গে বাড়তি যে জিনিসটি এখানে যুক্ত থাকে তা ‘হল মেলার টান। সেখানে নিজে গিয়েই শুধু তৃপ্তি নেই, আত্মীয়-পরিজন সবাইকে নিয়ে গিয়েও আনন্দ।
একুশের বই-মেলা :
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয়জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমাদের জাতীয় মননের প্রতীক বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ মেলার সঙ্গে একুশের জাতীয় চেতনা যুক্ত থাকে। বাংলা একাডেমীর এই মেলা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যে এছাড়াও একটি পাঠ্যানুরাগী প্রজন্ম গড়ে তুলতে এবং আমাদের নিজস্ব এ দিবসটিকে স্মরণ করে প্রকাশকরা নতুন নতুন প্রকাশনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নতুন ও পুরাতন লেখকগণ নব উদ্দীপনায় ও নব চেতনায় নতুন নতুন বই রচনায় হাত দেন। কেউ উপন্যাস, গল্প, কবিতার বই লেখেন, আবার কেউ কেউ রচনা-প্রকাশনা দুটো নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।
এ মেলাটি বাংলা একাডেমী চত্বরে আয়োজন করা হয়। এ বই-মেলার প্রাঙ্গণেও কী বিচিত্র পরিবেশ। কোথাও ইউনিফর্ম পরা বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা লাইন করে এগোচ্ছে, আবার প্রবীণ তাঁর অনেকদিন আগেকার কোনো প্রীতিভাজনকে খুঁজে পেয়ে হাত বাড়িয়ে দেন সাহায্যে। কোথাও বইয়ের প্যাকেট হাতে নিয়ে দ্রুত হেঁটে-চলা দোকানি-কর্মচারি, কোথাও আবার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে মন্থর গতি জ্ঞানান্বেষী। কোথাও চা, কফি বা শীতল পানীয় খেতে খেতে বই-পাগলদের বিশ্রাম-সুখ-উপভোগ, কোথাও আবার সঙ্গীকে খুঁজে পাবার জন্য শান্ত-ক্লান্ত কোনো ব্যক্তির অন্বেষণ-কর্ম।
এছাড়া, বইয়ের বিভিন্ন স্টলেও নানা শ্রেণীর মানুষ, কেউ প্রাণপণ চেষ্টায় ঠেলাঠেলি করে কাউন্টারের দিকে এগুতে ব্যস্ত, কেউ আবার ভিড় এড়াবেন বলে স্টলের দরজায় দাঁড়িয়ে অন্যমনস্ক। কেউ এক–একটা বই হাতে নিয়ে ধীরে-সুস্থে পাতা ওল্টাচ্ছেন, কেউ-বা সন্ধানী আলোর মতো নিজের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছেন সাজিয়ে রাখা বইগুলোর ওপর দিয়ে। কেউ দেখছেন অনেক, কিনছেন সামান্যই, কেউ আবার ঝোঁকের মাথায় না দেখেই অনেককিছু কিনে ফেলছেন।
বিগত কয়েক বছর আমাদের দেশে বই মেলার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। বাংলা একাডেমী আয়োজিত গত কয়েক বছরের বই-মেলাই তার প্রমাণ। প্রতিবছরই এখানে ক্রেতা ও স্টলের সংখ্যা এবং বই ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়ছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জিজ্ঞাসু মানুষদের অভাব-অভিযোগ যত বাড়বে, যতই দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা তাদের শৃঙ্খলিত করবে, ততই বই-মেলার জনপ্রিয়তা বাড়বে; ততই সেখানকার উদার উন্মুক্ত পরিবেশে তাঁরা খুঁজে পেতে চাইবেন মুক্তির স্বাদ।