ইসলাম

ইসলাম কাহাকে বলে?

ইসলাম আল্লাহ তা’আলার মনোনীত “দ্বীন” বা জীবনব্যবস্থা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ কিভাবে জীবন যাপন করিবে ইহাতে তাহার নির্দেশ রহিয়াছে ইসলাম এ। অন্য কথায়, মানুষ যে সমস্ত উপায় অবলম্বনে আল্লাহকে জানিতে ও চিনিতে পারে তাহাকেই ইসলাম বলে। আর ইসলাম এ যাহারা বিশ্বাসী এবং অনুসারী তাহাদেরকে বলা হয় মুসলিম।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করিয়াছেন।

সমস্ত নবী ও রাসূলই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম প্রচার করিয়া গিয়াছেন।ইসলাম হইল মানব জাতির জন্য আল্লাহর দেওয়া জীবনবিধান । আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবী-রাসূলগণের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ।শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। আমরা এহেন নবীর উম্মত হইতে পারিয়া নিজেদেরকে সৌভাগ্যশালী মনে করি। আল্লাহ পাকের লাখো কোটি শুকরিয়া যে, তিনি স্বীয় অসীম দয়ায় আমাদেরকে মানবকুলে মুসলমানরূপে আখেরী নবীর উম্মত করিয়া পৃথিবীতে প্রেরণ করিয়াছেন।

আরো শুকরিয়া যে, আল্লাহ পাক তাঁহার শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি আমাদের হেদায়াতের জন্য পবিত্র কোরআন শরীফ নাযিল করিয়াছেন। কোরআনের বিধি-নিষেধ অনুযায়ী স্বীয় জীবন পরিচালনা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য ইসলাম। কোরআন পাক মানব জাতির হেদায়াতের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানরূপে নাযিল হইয়াছে । ইহা সকল প্রকার সমস্যার পূর্ণ সমাধানে সক্ষম। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতও কেহ রচনা করিতে সক্ষম হইবে না।

ইহা মানুষের পক্ষে সম্ভব নহে। ইহা মানুষের বাক্য নহে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্র বাণী। পাহাড়, পর্বত, আসমান, জমীনকে এই কোরআন বহন করিতে বলায় সকলেই অক্ষম হইল। কিন্তু মানুষ ইহা গ্রহণ করিল। কাজেই কোরআনের নির্দেশ অনুসারে মানুষের উপরই তাহাদের জীবন পরিচালনার দায়িত্ব বর্তাইয়াছে । কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আল্লাহর দেওয়া বিধিনিষেধ মানিয়া জীবন পরিচ-ালনার নামই হইল “ইসলাম”। 

গুগল ক্রোমের নতুন ফিচার
জাপানি মেয়েদের রুপের গোপন রহস্য জেনে নিন
হযরত আনাস রাযি আঃ এর জিবন কাহিনী সম্পর্কে জানুন

শরীয়ত

পবিত্র কোরআন ও হাদীস দ্বারা ইসলাম এর যে বিধান আমাদের উপর ধার্য করা হইয়াছে তাহাই শরীয়ত নামে অভিহিত। ইহার প্রথম ঈমান, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত । শরীয়তের নির্দেশ মুসলমানদের প্রতি সমভাবে ফরয করা হইয়াছে । ইহা ছাড়া মানব জীবনের অন্যান্য সৎ কার্যাবলীও শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত। যেমন-খাওয়া-পরা, চাকুরী-বাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিবাহ-শাদী ইত্যাদি।ইসলাম ধর্মের আদেশ ও নির্দেশগুলি যে সকল বিষয়ের ভিত্তিতে প্রমাণিত হইয়াছে, উহাদিগকে শরীয়তের দলীল বলে। তাহা চারটি। যথা- কোরআন, হাদীস, ইজমা ও কেয়াস।

১। কোরআন শরীফ ঃ

কোরআন হইল আল্লাহ পাক আমাদের নবী করীম (সাঃ)-এর প্রতি ওহী মারফত যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার সমষ্টি।

২। হাদীস ঃ হাদীস অর্থ কথা বা বাণী । ইসলাম  শরীয়তের পরিভাষায়, মহানবী (সাঃ)-এর বাণী, কর্ম ও অনুমোদনকে হাদীস বলে। অনুরূপভাবে সাহাবীদের কথা, কর্ম এবং অনুমোদনকেও হাদীস বলা হয়। হাদীস ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় ভিত্তিমূল । পবিত্র কোরআনের পরই হাদীসের স্থান।

৩। ইজমা ঃ ইহা ইসলামী কানুনের তৃতীয় উৎস। ইহার অর্থ কোন ব্যাপারে একমত বা মতৈক্য হওয়া। ইসলামী পরিভাষায় সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন ও ন্যায়নিষ্ঠ মুসলিম আলিম মুজতাহিদদের শরীয়তের বিধানের কোন বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হওয়া।

৪। কেয়াস ঃ কেয়াস শব্দের অর্থ পরিমাপ, অনুমান, তুলনা। কেয়াসের মূলকথা হাদীস, কোরআন ও ইজমার ভিত্তিতে পূর্ব সিদ্ধান্তকে দৃষ্টান্ত বা নজিররূপে গ্রহণ করিয়া উদ্ভূত নূতন সমস্যার সমাধানে নূতন নিয়মনীতি বা আইন প্রবর্তন করা।

৫। উপরোক্ত চারটি দলীল দ্বারা যে সকল আদেশ ও নিষেধ প্রমাণিত হইয়াছে তাহাকেই শরীয়তের বিধান বলা হয়। শরীয়তের বিধানগুলি সাধারণত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মোস্তাহাব, হালাল, হারাম, মাকরূহ ও মোবাহ নামে পরিচিত।

ফরয

যে সমস্ত ধর্ম কার্য দলীলে একিনী (অকাট্য প্রমাণ) দ্বারা প্রমাণিত হইয়াছে তাহাকে ধর্ম ইসলাম এ ফরয বলে। ইহা অবশ্যই পালন করিতে হইবে। বিনা ওযরে না করিলে কবীরা গোনাহ (অত্যন্ত পাপ) হইবে। ইহা অস্বীকার ও অবিশ্বাস করিলে কাফের হইতে হইবে। ফরয দুই প্রকার (১) ফরযে আইন, (২) ফরয কেফায়া । যাহা প্রত্যেকের জন্য ফরয বা অবশ্য কর্তব্য, তাহাকে ফরযে আইন বলে । যেমন- নামায-রোযা ইত্যাদি। যাহা সকলের উপরই ফরয কিন্তু তাহাদের মধ্যে যে কেহ পালন করিলেই সকলের পক্ষ হইতে তাহা আদায় হইয়া যায়, তাহাকে ফরযে কেফায়া বলে। যেমন- জানাযার নামায, জিহাদ ইত্যাদি।

ওয়াজিব

শরীয়তের যে সকল আদেশ অস্পষ্ট দলীল (দলীলে যত্নী) দ্বারা প্রমাণিত হইয়াছে । অর্থাৎ, ফরযের ন্যায় অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় নাই, তাহাকেমকছুদুল মুমীন বা বেহেশতের পথ। ওয়াজিব বলে । যেমন, বেতেরের নামায, সালামের জবাব দেওয়া, দুই ঈদের নামায ইত্যাদি । ইহা বিনা ওযরে ছাড়িয়া দিলে গোনাহগার হইবে, অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করিলে কার্ফের হইবে না। ইহা ছাড়া ফরয ও ওয়াজিবে কোন পার্থক্য নাই । উভয়ই অবশ্য পালনীয়।

সুন্নত

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁহার আসহাবগণ যে সকল কাজ ও এবাদত করিয়াছেন, তাহাকে সুন্নত বলা হয়। ইহা করিলে সওয়াব হইবে এবং অব- হেলা করিয়া না করিলে গোনাহ হইবে। সুন্নত দুই প্রকার, যথা- সুন্নতে মোআক্কাদা এবং সুন্নতে গায়রে মোআক্কাদা। যাহা হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ) এবাদত সূত্রে সর্বদাই করিতেন, মাত্র দুই একবার ওযরবশত ত্যাগ করিয়াছেন কিংবা যাহা করিবার জন্য বিশেষ তাকিদ দিয়াছেন, তাহা সুন্নতে মোআক্কাদা। যেমন- ফজর, যোহর ও মাগরিবের সুন্নত নামায ইত্যাদি। যাহা হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ) কখনও করিয়াছেন আবার কখনও করেন নাই এবং যাহা করিবার জন্য বিশেষ কোন তাকিদ নাই, তাহাকে সুন্নতে গায়রে মোআক্কাদা বা সুন্নতে যায়েদা বলে। ইহা না করিলে গোনাহ হয় না। যেমন-আসর ও এশার চারি রাকআত সুন্নত নামায ইত্যাদি কিন্তু, করিলে অসীম সওয়াব হয়।

নফল

ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত ভিন্ন যে সকল অতিরিক্ত এবাদত রাসূলুল্লাহ্, (সাঃ) ও তাঁহার আসহাবগণ সময় সময় করিয়াছেন আবার কোন সময় করেন নাই, তাহাকে নফল বলে। নফল এবাদত করিলে সওয়াব হয়, না করিলে গোনাহ নাই । যেমন- মাগরিবের সুন্নত নামাযের পর দুই রাকআত নফল নামায, মহররম চাঁদের প্রথম দশ দিন রোযা রাখা ইত্যাদি ।

মোস্তাহার

যে সকল এবাদত হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ) ও তাঁহার আসহাবগণ ভাল জানিয়া কোন সময় করিয়াছেন এবং কোন সময় করেন নাই, তাহাকে মোস্তাহাব বলে। ইহা করিলে সওয়াব হয়, না করিলে গুনাহ হয় না।

যেমন—ঈদুল ফেতের নামাযের আগে কিছু মিষ্টি খাওয়া, ডান দিক হইতে অযু আরম্ভ করা ইত্যাদি।হালাল যাহা করিতে, খাইতে বা ব্যবহার করিতে শরীয়ত আদেশ দিয়াছে এবং নিষেদ করে নাই, তাহাকে হালাল বলে । যেমন- ব্যবসা-বাণিজ্য করা, পরিশ্রম করিয়া অর্থোপার্জন করা, গরু, ছাগল, মোরগ, উট প্রভৃতির গোশত খাওয়া ইত্যাদি। হালাল জিনিসকে হালাল বলিয়া অস্বীকার করা কুফরী।

হারাম

অকাট্য দলীল দ্বারা যে সকল কাজ করা নিষেধ বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে তাহাকে হারাম বলে । যে এই নিষেধ না মানে সে পাপী (ফাসেক) এবং কঠিন শাস্তি ভোগ করিবে । যে হারামকে হারাম বলিয়া বিশ্বাস না করিবে সে কাফের হইবে। যেমন- সুদ গ্রহণ করা, চুরি করা, শূকুরের গোশত খাওয়া, মাদকদ্রব্য পান বা শরীয়ত নিষিদ্ধ দ্রব্যাদি আহার করা ইত্যাদি। নিম্নে কতগুলি হালাল ও হারাম বস্তুর তালিকা দেওয়া হইল :

(১) মরা জীব-জন্তু খাওয়া হারাম। কিন্তু মরা মাছ খাওয়া হালাল।

(২)রক্ত হারাম।

(৩) শূকরের গোশত খাওয়া হারাম।

(৪) মানুষের গোশত খাওয়া হারাম।

(৫) যে সকল প্রাণী কোন দেব-দেবীর নামে জবাই করা হইয়াছে তাহার গোশত হারাম।

(৬) যে সকল হালাল জীব-জন্তু গলা টিপিয়া অথবা পিটাইয়া হত্যা করা হইয়াছে অথবা উপর হইতে পড়িয়া মারা গিয়াছে অথবা কোন ভোঁতা অস্ত্র দ্বারা বা বন্দুকের গুলীতে হত্যা করা হইয়াছে অথবা কোন হিংস্র প্রাণী মারিয়া ফেলিয়াছে, এইরূপ প্রাণীর গোশত হারাম।

(৭) হিংস্র প্রাণী যেমন-বাঘ, ভল্লুক, সিংহ, শিয়াল, কুকুর ইত্যাদি এবং হিংস পক্ষীর গোশতও হারাম। যেমন-চিল, কাক, ৰাজ ইত্যাদি।

(৮) যে সকল প্রাণী সাধারণত নাপাক ও মরা জীবজন্তু খাইয়া বাঁচে তাহাও হারাম। যেমন- চিল,কাক ও শকুন ইত্যাদি ।

(৯) যে সকল প্রাণী গর্তে বাস করে তাহাও হারাম ।যেমন- সজারু, গোসাপ, কচ্ছপ ইত্যাদি। (১০) যে সকল প্রাণী কষ্টদায়ক, বিষাক্ত ও ক্ষতিকর, তাহাও হারাম। যেমন-সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি ।

(১১) ঘোড়া,গাধা, খচ্চর এবং হাতীর গোশত হারাম।

(১২) মাছ ব্যতীত সকল জলজ প্রাণী খাওয়া হারাম । যেমন— কুচে, কাঁকড়া, কচ্ছপ ইত্যাদি ।

(১৩) যে সকলপানীয় দ্রব্য মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটায় ও মাতলামি সৃষ্টি করে তাহা পান করা হারাম। যেমন— মদ, আফিম, গাঁজা, হিরোইন ইত্যাদি। অন্যায়ভাবে কাহারও অধিকার হরণ করা, সুদ খাওয়া, ঘুষ দেওয়া, যেনা, চুরি, ডাকাতি, আমানতের খেয়ানত, মিথ্যা কথা, অঙ্গীকার ভঙ্গ, অন্যায়ভাবে হত্যা জুলুম, পিতামাতার অবাধ্যতা, স্ত্রী,পুত্র, মা, বাবার হক আদায় না করা এবং প্রয়োজনীয় এলমেদ্বীন শিক্ষা না করা ইত্যাদি হারাম । হালাল জানোয়ারের প্রস্রাব-পায়খানা ব্যতীত আরও কতিপয় জিনিস খাওয়া নাজায়েয ।

যেমন ঃ প্রবাহিত রক্ত, পিত্ত, পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ, মূত্রাশয়, অণ্ডকোষ, পায়খানার স্থান, গুটলি বা পমেট লিকা এবং হারাম মগজ, যাহা শিরদাঁড়ার মধ্যে থাকে । মাছ পানিতে আপনা আপনি মরিয়া চিৎ হইয়া ভাসিয়া উঠিলে উহা খাওয়া নাজায়েয । গরম বা চাপাচাপির দরুন মরিয়া ভাসিয়া উঠিলে উহা খাওয়া জায়েয আছে।গরু-ছাগলের নাড়ি-ভুঁড়ি খাওয়া হারাম বা মাকরূহ নহে, জায়েয । তবে ভালভাবে সাফ করিয়া মনের সন্দেহ দূর করিয়া খাইতে হইবে।

মাকরূহ

মাকরূহ দুই প্রকার—(১) মাকরূহ তাহরীমী ও (২)মাকরূহ তানযীহী। মাকরূহ তাহরীমী ঃ মাকরূহ অর্থ খারাপ বা অপছন্দনীয়, তাহরীমী অর্থ হারামকারী । অর্থাৎ, যে মাকরূহ হারামের কাছাকাছি। যে সকল কাজ নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশ নাই তবে কোন কোন হাদীসে ইহার অপছন্দীয় হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহাকে মাকরূহ তাহরীমী বলে। ইহা হারামের কাছাকাছি বলিয়া বর্জনীয়। মাকরূহ তাহরিমী অস্বীকার ও বিনা ওযরে করিলে কাফের হইবে না, ফাসেক হইবে এবং শাস্তির যোগ্য হইবে। যেমন—কেবলার দিকে মুখ করিয়া প্রস্রাব-পায়খানা করা ইত্যাদি।

মাকরূহ তানযীহী ঃ

যে সমস্ত কাজ ইসলামী শরীয়তে অসঙ্গত ও অন্যায়, কিন্তুএই ব্যাপারে কোন নিষেধবাণী নাই, বরং পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা আছে। মাকরূহ তানযীহীও পরিত্যাগ করা উচিৎ। তবে করিয়া ফেলিলেতেমন কোন গোনাহ হয় না। ইহা মোস্তাহাবের বিপরীত। যেমন কোন ওযর না থাকা সত্ত্বেও ডান হাতে নাক সাফ করা। ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার না করিয়া শুধু পানি দ্বারা এস্তেনজা করা ইত্যাদি।

মোবাহ বা জায়েয ঃ

মোবাহ্ কাজে আল্লাহ তাআ’লা মানুষকে স্বাধীনতা বা এখতিয়ার দান করিয়াছেন, ইচ্ছা করিলে করিতে পারে, নাও করিতে পারে। করিলেও সওয়াব নাই, না করিলেও আযাব নাই। মোবাহ কাজের সঙ্গে যদি ভাল ফল ও নিয়ত যুক্ত হয় তবে তাহা সওয়াবের এবং মন্দ ফল ও মন্দ নিয়ত যুক্ত হইলে তাহা গোনাহের কাজ হইয়া যায়। যেমন-মাছ, গোশত খাওয়া, পানাহার করা, কৃষিকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী-বাকুরী, দেশ ভ্রমণ, আল্লাহর সৃষ্টি দৰ্শন ইত্যাদি ।

বেদআত

শরীয়তবিরুদ্ধ বহু বেদআত ও বদ রসম লোকের আচার-ব্যবহারে জাহির হইয়া পড়িয়াছে। যেমন : বিবাহ-শাদীতে অতিরিক্ত খরচ করা। আল্লাহ তা’আলা বলিয়াছেন, অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই। বাজি পোড়ানো, বাজনা বাজানো, জীবন্ত বৃক্ষের পাতার দ্বারা অথবা কলাগাছ দ্বারা দরজা সাজানো, বরকে বেগানা স্ত্রীলোকের সামনে নিয়া যাওয়া, উঁকিঝুঁকি মারিয়া বর-কন্যার তামাশা দেখা, বেগানা পুরুষ, মেয়ে একে অপরকে দেখা, বিবাহ-শাদীতে বরের মুখে রং দেওয়া ও হাতে রাখী-বন্ধন করা, পুরুষের হাতে মেহেন্দি ব্যবহার করা ।

যাত্রাকালে হাঁচি দেওয়া, কাক ডাকা, খালি কলস, শৃগাল দেখিয়া শুভাশুভ মনে করা, চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণকালে আহার না করা এবং গর্ভবতী ও তাহার স্বামীর পক্ষে সন্তানের অমঙ্গল আশংকায় কোন কিছু না কাটা এবং জবাই না করা, নৌকা বাইচ, মর্সিয়া, জারী গাওয়া, গরু, মোরগ ও কুকুরের লড়াই, বাজি রাখিয়া গরু, ঘোড়া ও কুকুর দৌড়ান, কোথাও যাত্রাকালে দরজার চৌকাঠ ছুঁইয়া সালাম করা, মসজিদের চৌকাঠ ও অন্যান্য জায়গা সালাম করা, টিকটিকির শব্দে সত্যের লক্ষণ ধারণা করা, আঁতুড় ঘরের সামনে সন্তানের নিরাপত্তার জন্য কোচ, কাঁটা গাড়িয়া রাখা, মাথার নিকট লোহা, ঝাড়ু

ইত্যাদি রাখা, আঁতুড় ঘরে সারারাত বাতি জ্বালাইয়া রাখা, খতনা গৃহে প্রবেশ করাকালেআগন্তুক ব্যক্তিকে নিম পাতায় পানি ছিটাইয়া দেওয়া, গোশালায় জুতা-খড়ম রাখিয়া প্রবেশ করা, হায়েয ও নেফাস অবস্থায় গোসল ব্যতীত কোন পানাহ- ারের পাত্র স্পর্শ না করা, বৃষ্টি, রোদ, মোরগ, হাঁস, মশা, মাছি, গরু, ছাগল, কাক, চিল ও সময় ইত্যাদিকে গালি দেওয়া, পিপীলিকা বা জীব-জানোয়ারকে আগুনে পোড়াইয়া মারা, পীরের মাজারে মানত করা, এইরূপ মনে করা যে, পীরের মাজারে মানত করিলে পীর সন্তুষ্ট হইবে ।

কবরস্থ ব্যক্তির নামে গরু, ছাগল প্রভৃতি জবাই করা, পীরের ছেলে মূর্খ হইলেও পীর বলিয়া মানা বা বিশ্বাস করা;  কোন নবী ও অনুপস্থিত পীরকে সশরীরে মজলিসে হাজির জানা, পীর মুরীদের সব বিষয় জানে বলিয়া ধারণা করা, উচ্চ আওয়াজে যিকির করা, যাহাতে নামাযীর নামায অথবা নিদ্রিত ব্যক্তির ঘুমের ব্যাঘাত হয়। যে ঘরে পীর অবস্থান করিতেন বা করিবেন বলিয়া আশা-সেই ঘরে বাতি দেওয়া ও লোবান জ্বালান এবং রূহানী অবস্থায় তথায় পীরের উপস্থিতির বিশ্বাস করা,মহররমে বা অন্য দিনে নিরামিষ খাইয়া রোযা রাখা, মেয়ে-পুরুষ একত্রে বসিয়া যিকির করা, আল্লাহ শুধু বাতেন দেখিবেন

জাহের দেখিবেন না বলিয়া ধারণা করা, কোরআন শরীফ ৪০ পারা ধারণা করা (কুফরী), ঘরের মেজেতে বা দরজায় আলপনা বা চিত্র আঁকা, বর-কনেকে ধান-দুর্বা দিয়া বা কুলা সাজাইয়া বরণ করিয়া ঘরে তোলা, সালামের বিনিময়ে আদাব দেওয়া। আরও বহু বেদআত মুসলমানের মধ্যে ডুকিয়াছে যাহা দ্বারা ঈমান হালকা হয়। সব গোনাহের জন্য মানুষ আল্লাহর নিকট মাফ চায় কিন্তু বেদআতকে গোনাহ মনে করে না বলিয়া বেদআতকারী আল্লাহর কাছে মাফ চাহে না, কাজেই বেদআতের গোনাহ মাফ হয় না। যেমন-ফোঁটা ফোঁটা পানির দ্বারা সমুদ্র হয়, তেমনি বেদআতের ছোট গোনাহের দ্বারা বড় গোনাহের সৃষ্টি হয়। কাজেই মা- বোনেরা বেদআত গোনাহ থেকে বাচিতে চেষ্টা করিবেন। কারণ ইহাতে নেক আমল নষ্ট হইয়া যাইবে।