অযু করার নিয়ম ও নিয়ত

অযু

শরীর পবিত্র করবার নিয়তে পাক পানি দ্বারা শরীয়তের কানুন অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার নামই অযু। যে পানি দিয়ে অযু করবে তা অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। যেমন- নদী ও খাল ইত্যাদির প্রবাহিত পানি এবং কূপ, পুকুর, বরফ ও ঝর্ণার পানি ইত্যাদি।

অযু কত প্রকার

অযু তিন প্রকার– ১ম, ফরয, যথা- নামাযের জন্য অযু করা। ২য়, ওয়াজিব, যথা— তাওয়াফ করার জন্য অযু করা, ৩য়, মোস্তাহাব যথা- মুখস্থ কোরআন তেলাওয়াতের জন্য, নিদ্রা যাবার জন্য, গোসলের জন্য সর্বদাই অযুর সাথে থাকবারজন্য অযু করা। অযুর কবজের পরিচয় ফরয অযুতে চারি ফরয ঃ ১। মুখমণ্ডল ধৌত করা (অর্থাৎ কপালের উপরিভাগ হতে থুতনির নীচ পর্যন্ত, এক কানের লতি হতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ধৌত করা)। ২।কনুইসমেত দুই হাত ধৌত করা। ৩। মাথার একচতুর্থাংশ মাসেহ করা। ৪। দুই পায়ের গিরা পর্যন্ত ধৌত করা।

গুগল ক্রোমের নতুন ফিচার
মোবাইল এর ক্ষতিকর দিক
এসইও কি এবং কিভাবে করতে হয়

অযুর সুন্নত

১। অযুর প্রারম্ভে বিসমিল্লাহ বলা,

২। উভয় হাত কব্‌জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া

৩।মেসওয়াক করা,

৪। তিনবার কুলি করা,

৫। তিন বার নাকের ছিদ্রে দক্ষিণ হস্ত দ্বারা পানি প্রবেশ করায়ে বাম হাত দ্বারা ঝেড়ে ফেলা,

৬। সমস্ত মুখমণ্ডল তিনবার ধোয়া,

৭। কনুইসহ দুই হাত তিনবার ধোয়া।

৮। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা,

৯। দুই কান একবার মাসেহ করা,

১০। গিরাসহ দুই পা তিনবার ধোয়া,

১১। উভয় হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলো খেলাল করা,

১২। এক অঙ্গ শুকাবার পূর্বেই অন্য অঙ্গ ধোয়া।

১৩। তরতীব মত অযু করা,

১৪। নিয়ত করা।

অযু ভঙ্গের কারণসমূহ

১। প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে মলমূত্র বে’র হলে,

২। রক্ত বা পুঁজ বে’র হয়ে গড়ায়ে পড়লে,

৩। বায়ু নির্গত হলে,

৪। ক্রিমি বে’র হলে,

৫। বমি হলে,

৬। কোন বস্তুর সাথে ঠেস দিয়ে বা চিত; কাত হয়ে ঘুমালে,

৭। বেহুঁশ হলে,

৮। পাগল বা মাতাল হলে এবং

৯। নামাযের মধ্যে আওয়াজ করে হাঁসলে।

অযুর মোস্তাহাব

১। ডান দিক হতে অযু আরম্ভ করা,

২। কেবলামুখী বসে অযু করা,

৩। অযুতে অন্য লোক হতে সাহায্য না লওয়া,

৪। নামাযের ওয়াক্ত আসার পূর্বে অযু করা,

৫।অযুর সময় কথা না বলা,

৬। উঁচু স্থানে বসে অযু করা,

৭। অযুর নিয়ত মুখে বলা

৮। অযুর অঙ্গ ভালরূপে মর্দন করে ধোয়া,

৯। আংটি কিংবা গহনা হেলায়ে দেওয়া,

১০। ঘাড় মাসেহ করা,

১১। প্রয়োজনের বেশি পানি খরচ না করা,

১২। অযুর শেষে দুরূদ ও কালেমা শাহাদাত পড়া,

১৩। অযুর শেষে দাঁড়ায়ে অবশিষ্ট পানির কিছু পান করা।

ইসলামে নামাযের গুরুত্ব
তালাকের মাসাআলা

অযুর মাকরূহসমূহ

(১) মুখ ধৌত করার সময় মুখে জোরে পানি নিক্ষেপ করা।

(২) নতুন পানি দ্বারা তিনবার মাথা মাসেহ করা।

(৩) বিনা ওযরে কুলি ও নাকে পানি বাম হাতে দেওয়া।

(৪) ডান হাতে নাক সাফ করা।

(৫) অযুর কোন পাত্র নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে লওয়া (সেরূপ মসজিদে কোন স্থান নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে লওয়াও মাকরূহ)।

(৬) অযুর কোন অঙ্গ তিন বারের কম বা বেশি ধৌত করা।

(৭) পানি অপব্যয় করা।

অযু করবার নিয়ত 

নাওয়াইতু আন্ আতাওয়ায্যাআ লিরাফইল্ হাদাসি ওয়াসতিবাহাতা গ্লিসসালাতি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহি তাআ’লা।

অর্থ : নাপাকী দূর করবার জন্য ও নামায শুদ্ধভাবে পড়বার জন্য এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের জন্য অযু করতেছি।তাআলার নৈকট্য লাভের জন্য অণু

মেয়েদের ঘরে বসে ইনকাম করার সহজ উপায়
জাপানি মেয়েদের রূপের রহস্য জেনে নিন

অযু শুরুর দোআ

 বিসমিল্লাহিল্ আ’লিয়্যিল্ আ’যীম ওয়াল্হামদু লিল্লাহি আ’লা দীনিল্ ইস্‌স্লামি আল্‌ ইস্‌স্লামু হাককুন্ ওয়াল্ কুরু বাতিলুন।

অর্থঃ সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহর তায়ালার নামে শুরু করিতেছি এবং ইসলাম ধর্মের জন্য সম্যক প্রশংসাই আল্লাহ উপযুক্ত। কেননা, ইসলাম সত্য ও কুফর (অবিশ্বাস) মিথ্যা এবং ইসলাম জ্যোতির্ময় এবং কুফর অন্ধকারময়।

 আল্লাহুম্মাজআ’লনী মিনাত্তাওয়াবীনা ওয়াজআলনী মিনাল্ মুতাহ্তহরিনা ওয়াজআ’লনী মিন ই’বাদিকাসসালিহীনা সোবহানাকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।

অর্থ : হে খোদা” আমাকে তওবাকারীদের মধ্যে শামিল কর এবং একজন পবিত্র লোক বানাও এবং তোমার একজন সৎ বান্দা হিসাবে গণ্য কর। তুমি পবিত্র, তোমার নিকট তওবা করতেছি।

অযু করবার নিয়ম

(১) পায়খানা-পেশাবের হাজত থাকলে দূর করে, গোসল দরকার হলে গোসল করে কেবলামুখী হয় উঁচু স্থানে বসবে। তারপর বিস্মিল্লাহসহ অযুর নিয়তকরতঃ অযু আরম্ভ করবে এবং মনে মনে অযুর দোয়া পাঠ করবে।

(২) প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাত তিনবার করে কব্জা পর্যন্ত ধৌত করবে। নখের মধ্যে কোন ময়লা থাকলে সরায়া ফেলে পানি পৌঁছায়ে দিবে। আঙ্গুলে আংটি থাকলে সরায়ে আংটির নীচে পানি পৌঁছাবে।

(৩) অযুর সময় দন্ত সাফ করত গড়গড়ার সাথে তিনবার কুলি করবে।

(৪) নাকের ভিতরে ডান হাতে তিনবার পানি ফিকিয়ে দিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা সাফকরতঃ পানি ঝোড়ে ফেলবে।

(৫) কপালের উপরিভাগের চুলের গোড়া হতে থুতনির নিম্নভাগ পর্যন্ত এবং এক কর্ণমূল হতে অন্য কর্ণমূল পর্যন্ত সমস্ত মুখমণ্ডল দুই হাত দ্বারা তিনবার ধৌত করবে। স্ত্রীলোকদের নাসিকায় অলংকা থাকলে তা ঘুরায়ে সরায়ে উহার নিম্নে পানি পৌঁছায়ে দিবে।

(৬) ঘন দাড়িবিশিষ্ট লোকেরা দুই হাতের আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে দাড়ি মাসেহ (খেলাল) করবে।

(৭) ডান হাতের তালুতে পানি নিয়ে আঙ্গুল হতে কনুইসমেত পানি গড়ায়ে ভিজায়ে দিবে ও বাম হাত দ্বারা ভাল করে তিনবার ধুয়ে ফেলবে। তারপর তিনবার এই নিয়মে বাম হাত ও ডান হাত দ্বারা ধুয়ে ফেলবে। স্ত্রীলোকের হাতে গহনা থাকলে উহা সরায়ে সব জায়গায় পানি পৌঁছাবে।

(৮) উভয় হাতে পানি নিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলদ্বয় বাদ দিয়ে অন্য সবগুলো আঙ্গুল এবং হাতের তালু দ্বারা সামনের দিক হতে সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসেহ করে পিছনের দিকে নিয়ে আবার পিছনের দিক হতে সম্মুখের দিকে আনবে। তারপর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পিঠ এবং দুই শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা কানের ভিতর একবার মাসেহ করবে।

(৯) তারপর প্রথমে তিনবার ডান পা ও পরে তিনবার বাম পা উত্তমরূপে গিরা পর্যন্ত ধুয়ে ফেলবে। এই সময় বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুল দ্বারা প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পায়ের আঙ্গুলগুলো খেলাল করে ফেলবে।